আর্থিকখাতের নীতি ও তদারকিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে
আর্থিকখাতের জন্য নীতি প্রণয়ন ও তদারকির মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে ধীরে ধীরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। আর্থিকখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নারী ও পুরুষ কর্মকর্তাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও পুরুষ কর্মকর্তার তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ - এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত ছয়টি ধাপে নারী কর্মকর্তার অংশগ্রহণ বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।
এই পাঁচ বছরে নারী কর্মকর্তা ১২৬ জন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫৫ জনে। অন্যদিকে পুরুষ কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৮ জন থেকে ৩,৩২২ জনে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকুরিতে প্রবেশের প্রথম ধাপ হচ্ছে সহকারী পরিচালক। গেল বছর এই পদে কর্মরত নারী ও পুরুষের সংখ্যা ৯৬৯ জন, এর মধ্যে নারী ২১৯ জন এবং পুরুষ ৭৫০ জন। অন্যদিকে সর্বোচ্চ পদ নির্বাহী পরিচালকদের মধ্যে নারী আছেন ৫ জন এবং পুরুষ আছেন ২৫ জন।
উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এই পদে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন নারী কর্মরত ছিলেন। দেশের প্রথম সেই নারী ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানাকে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সময় অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা শিখা বলেন, তাদের সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা খুবই নগন্য ছিল।
তখন মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যেত কম। তিনি জানান, নারী হওয়ায় তখন গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশ নেয়ার সুযোগও ছিল কম। বর্তমানে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি যেমন বেড়েছে তেমনি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র হয়েছে। পুরুষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নারীরাও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। পরিবেশ পুরোপুরি নারীবান্ধব। তবে এখনো নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ পুরুষদের চাইতে একটু বেশিই দিতে হয় বলে তিনি মনে করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যম পর্যায়ের একজন নারী কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যাডার্ডকে বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা থেকে শুরু করে দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যন্ত নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান। কোন ধরনের বৈষম্য এখানে নেই। সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদাহরণ হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নারীর অংশ গ্রহণ ধীরে ধীরে বাড়লেও এখনো পুরুষদের তুলনায় কম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সরকারি চাকুরি বিধিমালা অনুযায়ীই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। মেধা তালিকায় নারীরা যদি বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসতে পারে, তাহলে তাদের সংখ্যা আরো বাড়বে।
এদিকে, রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত 'জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট অফ ব্যাংকস এন্ড এফআই'স' শীর্ষক প্রতিবেদনে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী ও পুরুষদের চিত্র উঠে এসেছে।
গেল বছর ১,৮৩,২০৬ জন ব্যাংকারের মধ্যে পুরুষ ছিল ১,৫৪,৮২৮ জন এবং নারী ২৮,৩৭৮ জন। যদিও গেল বছর ২০১৯ সালের তুলনায় পুরুষ ব্যাংকার বাড়লেও, নারী ব্যাংকারের সংখ্যা ১০২ জন কমেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারি ও বিদেশি ব্যাংকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে নারী কর্মীদের সংখ্যা কমেছে। তবে বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি নারী ব্যাংকার কমেছে বিদেশি ব্যাংকে। এসব ব্যাংকে গেল বছর ১৪৬ জন কমে নারী কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪৮ জনে। এদিকে সরকারি ব্যাংকগুলো ১২৮ জন কমে নারী কর্মীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭,৬৩৯ জনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যার্ডার্ডকে বলেন, সরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী কমার পিছনে অবসরে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন কারণ দেখেন না তিনি।
তবে বিদেশি ব্যাংকে ঠিক কেন কমছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে করোনার প্রভাবে খরচ কমানোর ফলে ছাঁটাই কিংবা চাকরি ছেড়ে দেয়ার একটি বিষয় থাকতে পারে। এছাড়া একটি বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার কারণও আছে বলে তার ধারণা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেল বছর ব্যাংকগুলোতে বোর্ড সদস্য হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী পরিচালক আছে বিদেশি ব্যাংকে, ১৭ শতাংশ।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর উচ্চ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ এখন ৯ শতাংশ, মধ্য ও প্রারম্ভিক পর্যায়ে যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ শতাংশ। প্রায় একই ধরনের চিত্র নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।