টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে নারী ক্ষমতায়ন,নেতৃত্ব ও লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতের আহ্বান টিআইবির
নারী ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও সকলক্ষেত্রে নারীর নেতৃস্থানীয় ভূমিকা প্রতিষ্ঠার সহযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ সোমবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানায় সংস্থাটি।
এবছর 'টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন: সমতা ও নারী নেতৃত্ব' প্রতিপাদ্যের আওতায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে টিআইবি।
একইসময় মন্ত্রীসভা বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে ২৪টি উপজেলার নারী নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্যে দু'দিন ব্যাপী এক জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করেছে তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই হলেন নারী। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। এছাড়া, নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া লিঙ্গ সমতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না।"
"লিঙ্গ সমতা এবং দুর্নীতি পরস্পর সম্পর্কিত। সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য থাকলে তা সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ব্যাহত করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্নীতির কারণেই নারীর সামগ্রিক ক্ষমতায়নের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে," তিনি বলেছেন।
"যেসব দেশ লিঙ্গ সমতা এবং নারী ক্ষমতায়ন সুষ্ঠুভাবে অর্জন করতে পেরেছে হয়েছে, তারা সেটি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমেই করতে পেরেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে নারী ক্ষমতায়নকে, তাদের অর্জনকে বাধার মুখে ফেলেছে," ইফতেখারুজ্জামান যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, "দূর্নীতির কারণে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে আছে। ২০১৭ সালে করা টিআইবি'র জাতীয় খাদ্য জরিপ অনুসারে, সেবাগ্রহীতা পর্যায়ে ৩১.৮ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির কারণে নারীর উপর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়েছে। নারী শুধু দুর্নীতির শিকার হচ্ছে তাই নয়, বরং তাদের দুর্নীতির মাধ্যম এবং সহযোগী হিসেবেও অপব্যবহার করা হচ্ছে। এই বাস্তবতায় নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকরভাবে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে।"
উল্লেখ্য, সুশাসন ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে করণীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে টিআইবি ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: কোভিড-১৯ সংকটকালে উপার্জনমূলক কর্মকা-, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যয়বিচারলাভ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিতে যথাযথ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় অন্যতম প্রতিবন্ধক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার ও দুর্নীতি প্রতিরোধকে মূলধারাভুক্ত করতে হবে; টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে দুর্নীতি কমিয়ে আনাসহ সরকারকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে হবে। 'নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫' পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন করতে হবে; সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে 'গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (সংশোধিত) আইন ২০০৯' অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাড়াতে হবে; কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে; দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় এবং নারীর নামে অবৈধ-সম্পদ অর্জনের আইনি বিধান ও সাজা সম্পর্কে নারীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ইত্যাদি।