স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ফের বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ
- গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত ৮৪৫ জন যা বিগত ৫৪ দিনে সর্বোচ্চ
- এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫
- মাহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১২-২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে
- দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে ল্যাবরেটরির স্থাপনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদ পেতে কাজ করছে সরকার
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার এক বছর পর আবার বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণের হার। এখন মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যবিধি মানিয়ে চলতে বাধ্য করা, টিকাদানে আগ্রহ ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাস্ক পরতে অনীহা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, পর্যটন কেন্দ্রে জনসমাগমের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) আয়োজিত 'করোনার এক বছরে বাংলাদেশ: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা।
এখন দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি বুঝতে গবেষণা করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া, দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদন করার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার (৮ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ৮৪৫ জনের দেহে, যা বিগত ৫৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫ জন। মহামারির এক বছরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৭৬ জনে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ৫১ দিনে শনাক্তের হার ৪.৯৮ শতাংশ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
নাসিমা সুলতানা বলেন, এক বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি অনির্দিষ্টকাল স্থায়ী হওয়ায় মানুষের জন্য দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কষ্টকর। এছাড়া টিকাদান নিয়ে শুরুতে গুজব থাকলেও তা প্রতিহত করা গেছে, কিন্তু এখন ভ্যাকসিন নেওয়ার হার আবার কমেছে সেটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "করোনাভাইরাস এখনো দেশ থেকে চলে যায় নাই। আবার সব মানুষও এখন ভ্যাকসিন নেয় নাই। কিন্তু তারপরও অনেকেই মাস্ক পরছেনা। কক্সবাজারে লাখ লাখ মানুষ যাচ্ছে। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে, সামাজিক অনুষ্ঠান বাড়ছে, আর শুধু বাংলাদেশ করোনামুক্ত হলে চলেবে না সারা পৃথিবীকে করোনা মুক্ত হতে হবে। আমাদের করোনা মোকাবেলার যে প্রচেষ্টা ধরে রাখতে হবে।"
আগামীতে দেশেই তৈরি হবে করোনা ভাইরাসে প্রতিরোধী করোনা টিকা এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও বলেন, "আমাদের দেশের কিছু ওষুধ কোম্পানির করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ল্যাব প্রয়োজন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবের কেমিকেল সাইড ব্লিউএইচও এর অনুমোদন পেয়েছে, কিন্তু বায়োলজিক্যাল সাইড এখনো ডব্লিউএইচও'র এর অনুমোদন পায়নি। ওই ল্যাব যাতে ডব্লিউএইচও'র অনুমোদন পায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।"
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "করোনাভাইরাস শিখিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করলে কী হয়। করোনার কারণে পৃথিবীর অনেকে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। কাজেই আগামীতে এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১২ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার লোকসানে পড়েছে।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামে এব্যাপারে বলেন, "অন্যান্য দেশে করোনা বিস্তার লাভ করলেও আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণে আসছে। গরমের দিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। একটি স্যালো ওয়েভ আসতে পারে। করোনাভাইরাসের গতি প্রকৃতি কেমন তা জানতে গবেষণার করা প্রয়োজন। গবেষণার জন্য অর্থায়ন প্রয়োজন।"
এই গবেষণার কাজে অর্থ বরাদ্ধের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনার অর্থ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।