জ্বালানী গবেষণায় কোটি টাকার অনুদান পেলেন তৌফিক রেজা
ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌফিক রেজা প্রায় দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের অনুদান লাভ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে থাকাকালীন তৌফিক রেজা প্রচুর গবেষণায় অংশ নিয়েছেন কিন্তু এবারই প্রথম নিজের দেশের লাখো মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনে গবেষণার জন্য অনুদান লাভ করলেন তিনি।
তৌফিক এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মিলে তিন বছরের জন্য প্রায় এক লাখ ৭৪ হাজার ডলারের মার্কিন অনুদান লাভ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) কর্তৃক প্রদত্ত এই অনুদানের মাধ্যমে তারা জৈব বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরির গবেষণা পরিচালনা করবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যেভাবে বিকাশ লাভ করছে, তাতে শীঘ্রই দেশটিতে জ্বালানির সংকট তৈরি হবে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ইতিমধ্যে সংরক্ষিত জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
তবে গবেষকেরা দেখাচ্ছেন নতুন আশা। বায়োজেনিক বর্জ্য নামক একটি পচনশীল উপজাত পদার্থ যা সাধারণত পরিবেশকে দূষিত করে, তা থেকেই এখন জ্বালানি উৎপাদন করে দেখাবেন গবেষকেরা।
গবেষক দলটি এসব জৈবিক বর্জ্যকে কীভাবে জ্বালানিতে রূপান্তর করা যায় তা নিয়ে অনুসন্ধান করবেন। তাদের পরিকল্পনা, স্বল্পমূল্যে দেশব্যাপী বর্জ্য উৎপন্ন থেকে জ্বালানি বিতরণ করা ।
তৌফিক বলেন, "বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় আমার বেড়ে উঠা। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ কম হওয়ায় আমরা অনবরত লোডশেডিংয়ে অভ্যস্ত ছিলাম"।
"একদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে,আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করার মত খুব বেশি জমিও নেই আমাদের, আমি তাই দেশের এনার্জি সেক্টর নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। আমি বুঝেছি যে মানুষ বেশি মানেই বর্জ্যও বেশি। ফলে আমি সব সময় এই বর্জ্যকে কীভাবে জ্বালানিতে রূপান্তর করা যায় তার উপায় খুঁজছিলাম"।
এই গবেষণার পরীক্ষামূলক কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিচালিত হবে।
দলটি একটি উপদেষ্টা প্যানেল গঠনেরও পরিকল্পনা করেছে যা তাদের এবং শিল্পখাতের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মাঝে একটি ইন্টারেক্টিভ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
ইউএসএআইডি গত জানুয়ারিতে ৫.৮ মিলিয়ন ডলারের একটি অনুদানের ঘোষণা দেয় যা থেকে তৌফিক এবং তার দল ১ লাখ ৭৪ হাজার ডলার পেয়েছেন। মোট ২৬টি গবেষণা প্রকল্পকে অনুদান দেয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের জ্বালানী চাহিদা পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পেরে উচ্ছ্বসিত তৌফিক।
তিনি বলেন, "ইউএসএআইডি'র এ প্রকল্পটি একটি অত্যন্ত সময়োচিত প্রকল্প। বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরীর চ্যালেঞ্জটি গ্রহণের মাধ্যমে আমি আমার এতদিনের অর্জিত জ্ঞানকে ব্যবহারের সুযোগ পাব"।
"এই একটি প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আমি একাডেমিয়া, শিল্প খাত, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন খাতের সাথে সমন্বয়ের সুযোগ পাব। আমাদের প্রযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। আমার মনে হবে অবশেষে আমি দেশের জন্য কিছুটা করতে পেরেছি"।
- সূত্র: স্পেস কোস্ট ডেইলি