শঙ্কা নিয়েই চলছে বইমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি
একুশে বইমেলার সম্প্রসারিত অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝামাঝিতে অন্যন্যা প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া গেল বিক্রয়কর্মী ফারুক আহমেদকে। স্টলের কাঠামো তৈরি শেষ, এখন চলছে রঙ তুলির আঁচড়। তা দেখভাল করতেই এখানে এসেছেন তিনি। কথা বলতে চাইলে জানালেন, তাড়া আছেন, ছাপাখানায় যেতে হবে।
হাঁটতে হাঁটতে জানালেন, একবছর বড় কোন অনুষ্ঠান না থাকায় এবার মেলাকে ঘিরে তাদের প্রত্যাশা বেশি। প্রস্তুতিও নিয়েছেন সেভাবে। ব্যবসা ফেরানোর মোক্ষম মঞ্চ হিসেবে দেখছেন এবারের বইমেলাকে। তবে ঝড়-বৃষ্টির বাড়তি প্রস্তুতি এবং করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি নিয়ে চিন্তার কথাও জানালেন তিনি।
মেলা প্রাঙ্গণে এখন কাঠের ঠুক-ঠাক শব্দ আর নির্মাণ সামগ্রী টানাটানিতে ব্যস্ত সবাই । কোন কোন প্রকাশনী কাজ শেষ করে ফেলেছে। অধিকাংশই করছে রঙের কাজ । বাংলা একাডেমি চত্ত্বর আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই কর্মযজ্ঞ থেমে না থাকলেও, ১৮ মার্চ শুরু হতে যাওয়া এবারের বই মেলাকে ঘিরে শঙ্কা এখনো কাটেনি।
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সব সূচকে উর্ধ্বগতি এবং অধিক সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন করোনার নতুন ধরন চিহ্নিত হওয়ায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির গুরুতর রকম অবনতি ঘটলে মেলার ব্যাপারে অপ্রিয় কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে একাডেমির পক্ষ থেকে সম্ভব সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা মেলায় আসবেন তাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে'।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্চে মেলা হচ্ছে। তবে জীবনের মূল্য সব থেকে বেশি। তাই পরিস্থিতি যদি মেলা চালিয়ে যাওয়ার মতো না থাকে, তবে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে'।
বাংলা একাডেমির একাডেমির হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিড় এড়ানোর জন্য এবার মেলার পরিসর গতবারের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বাড়ানো হয়েছে। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার আয়তন ১৫ লাখ বর্গফুট।
উভয় অংশ (একাডেমি চত্ত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মিলিয়ে এবার ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দিয়েছি আমরা। মেয়াদ বরাবরের মতো এক মাসই হবে। মেলা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। একাডেমি এবার নতুন পুরানো ১১৫টি বই প্রকাশ করবে'।
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, ১৮ মার্চ বেলা ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের বইমেলার মূল থিম 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী'।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা 'আমার দেখা নয়াচীন' বইটির ইংরেজি অনুবাদ `NEW CHAINA 1952' –এর মোড়ক উন্মোচন করবেন। বরাবরের মতোই বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত এবং শুক্র ও শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মেলা খেলা থাকবে।
ব
ইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। এবারও থাকবে হুইল-চেয়ার সেবা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট থাকবে। এবার মেলা প্রাঙ্গণ থেকে দ্রুত বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকবে। বই সুরক্ষার জন্য থাকবে চারটি আশ্রয় কেন্দ্র।
মাস্ক পরায় কড়াকড়ির সাথে তিন স্তরের নিরাপত্তা
বইমেলায় এবার তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধিতে থাকবে কড়াকড়ি। অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে এবার নতুন আরো একটি প্রবেশ পথ থাকবে। পাশপাশি মেলায় আগত সকলের জন্য থাকবে পার্কিং সুবিধা।
বাংলা একাডেমি বলছে, মেলায় দোকানদার-দর্শনার্থী সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতেই দেয়া হবে না। প্রবেশ পথেই মাস্ক নিশ্চিত করা হবে এবং মাস্ক পরতে হবে নিয়ম মেনে। মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রাখলে তাদেরকে সতর্ক করবে বাংলা একাডেমি।
তাছাড়া সবার জন্য থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজের ব্যবস্থা। নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেলা প্রাঙ্গণে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে বসিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে মেলা প্রাঙ্গণে পরিদর্শন করেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এবারও শিশুচত্বর মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে 'শিশুপ্রহর' থাকবে না। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি বিশেষ মিলনায়তনে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাইকে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে।