হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে স্টল দিলো কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ
এ বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় স্টল চেয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএচপি) কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিল। তবে শুক্রবার আদালত সেই আবেদন খারিজ করেন। কিন্তু শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মেলার আয়োজকেরা আকস্মিক সিদ্ধান্তে ভিএচপির মাসিক পত্রিকা 'বিশ্ব হিন্দু বার্তা'-এর নামে একটি স্টল বরাদ্দ করেছেন।
বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড প্রাথমিকভাবে ভিএচপির স্টল চাওয়ার আবেদন নাকচ করেছিল। এরপর ভিএচপি আদালতের শরণাপন্ন হয়। তবে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের একক বিচারকের বেঞ্চ ভিএচপির আবেদন খারিজ করে রায় দেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, যদি আবেদনকারীদের স্টল বরাদ্দ না দেওয়া হয়, তাতে তাদের ব্যবসার অধিকার, বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোনোভাবে লঙ্ঘিত হয় না... গিল্ড আবেদনকারীদের কোনো অধিকার লঙ্ঘন করেনি, কারণ এটি তাদের বই বা পত্রিকা প্রকাশে বাধা দিচ্ছে না।
তবে ভিএচপির দক্ষিণবঙ্গ-এর সহ-সভাপতি দিলীপ কুমার ঝাওয়ার দ্য হিন্দুকে জানান, 'আমরা আদালতে হেরেছি। তবে শনিবার গিল্ডের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের মাসিক পত্রিকা বিশ্ব হিন্দু বার্তা–এর নামে একটি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, ভিএচপির এ মাসিক পত্রিকাটি ১৮৬৭ সালের প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অব বুকস অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধিত। এতে ধর্মীয় ইতিহাস, সাম্প্রতিক বিষয় এবং ভিএচপির কার্যক্রমের বিস্তারিত থাকে।
ঝাওয়ার বলেন, তারা ৭০০ বর্গফুট জায়গার জন্য আবেদন করেছিলের। তবে তাদেরকে ২৪৯ নম্বর স্টলে ২০০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সল্টলেকের বইমেলা প্রাঙ্গণে হবে।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চ্যাটার্জি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, স্টল কেবল প্রকাশক, বই বিক্রেতা এবং ম্যাগাজিনগুলোকেই বরাদ্দ করা হবে। ভিএচপি তাদের সংগঠনের নামে স্টল চেয়েছিল বলে আমরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম। তবে শুক্রবার আদালতের রায়ের পর তারা নতুনভাবে আবেদন করে এবং বিশ্ব হিন্দু বার্তা-এর নামে স্টল চায়। নতুন নামে আবেদন পুনর্বিবেচনা করার পর শনিবার তাদের স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে।'
এদিকে, মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর)-কে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ায় বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা প্রতিবাদ করেছেন। তবে তাদের আবেদনও কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়।
এপিডিআরের সিনিয়র কর্মী রঞ্জিত সুর বলেন, 'আমাদের এবং ভিএচপির আবেদন একই কারণে খারিজ হয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, ভিএচপি ও গিল্ডের মধ্যে আদালতের বাইরে একটি সমঝোতা হয়েছে। গিল্ড তাদের [ভিএইচপি] স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এ সমঝোতা হয়েছে।'
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে আগে দ্য হিন্দুকে বলেছিলেন, এ বছর তৃণমূল কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদি তাদের প্রকাশনার কোনো ইউনিট না থাকে।
রঞ্জিত সুর বলেন, 'এ বছরের অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় আহমদিয়া মুসলিম জামাত এবং ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলো রয়েছে। গিল্ডের সিদ্ধান্তটি স্ববিরোধী। এপিডিআরের নিজস্ব প্রকাশনা ইউনিট সক্রিয় রয়েছে এবং ১৯৭০-এর দশক থেকে তারা বইমেলার অংশ।'