অনূর্ধ্ব ১২ বছরের শিশুদের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবে মডার্না
ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মডার্না জানিয়েছে তাদের নতুন গবেষণায় ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।
গবেষণাটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৬ হাজার ৭৫০ জন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শিশুকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কতোজন নিবন্ধন করেছেন বা ইতোমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে তা জানায়নি মডার্না ইঙ্ক।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার ভ্যাকসিন ক্লিনিকের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. ডেভিড ওহোল বলেন, "শিশুদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়া ও এর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা জানতে অনেকেই আগ্রহী,"
অন্য আরেকটি গবেষণায় ১২-১৭ বছর বয়সী তিন হাজার শিশুর ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালাচ্ছে মডার্না।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে ১২ বছরের কম বয়সসীমার জন্য ভ্যাকসিনের অনুমোদন প্রয়োজন, ফলে এই গবেষণাটির ফলাফল আসতেও কিছুটা দেরি হবে।
অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন, শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্যও সহায়ক হতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ভ্যাকসিন ট্রায়ালে শিশুদের অন্তর্ভুক্তিকরণে আহ্বান জানিয়েছে।
জ্বর, হাত ব্যথা, ক্লান্তি, মাংসপেশি ও হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথার মতো ভ্যাকসিনের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রাপ্ত বয়স্কের চেয়ে শিশুদের মধ্যে আরও প্রকট হতে পারে। একারণে শিশুদের ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কী কী প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে- তা শিশুর মা-বাবাকে আগেই জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মডের্নার গবেষণায় প্রতি শিশুকে ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হবে। গবেষণাটি দুই ভাগে পরিচালিত হবে। প্রথম অংশে ২-১২ বছর বয়সী শিশুদের ৫০ বা ১০০ মাইক্রোগ্রামের দুটি ডোজ দেওয়া হবে। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৫ বা ৫০ বা ১০০ মাইক্রোগ্রামের ডোজ দেওয়া হবে।
দুটি গ্রুপেই প্রথম যে শিশুটিকে টিকা দেওয়া হবে তাকে সবচেয়ে কম ডোজের টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী শিশুকে টিকা দেওয়ার আগে ও ডোজ বাড়ানোর আগে তার আগেরজনের শরীরে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এভাবে কোন ডোজ এই বয়সসীমার জন্য কার্যকর তা বিশ্লেষণ করবেন গবেষকরা।
গবেষণার দ্বিতীয় অংশে পূর্ববর্তী বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নির্ধারিত ডোজ ও প্লেসবো শট দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের সঙ্গে ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে মডার্না। কোম্পানিটি জানিয়েছে এ গবেষণায় বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট অথোরিটির সঙ্গে কাজ করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
ভ্যাকসিন দেওয়ার পর অ্যান্টিবডির মাত্রা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অংশগ্রহণকারী শিশুদের এক বছর পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই গবেষকরা সিদ্ধান্ত নেবেন ভ্যাকসিন শিশুদেরও একইভাবে সুরক্ষা দেয় কিনা। এই সিদ্ধান্তে অ্যন্টিবডির মাত্রা প্রধান বিষয় বলে বিবেচিত হলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সংক্রমণের সংখ্যা, উপসর্গসহ বা উপসর্গবিহীন সংক্রমণও বিবেচনায় রাখা হবে।
অন্যদিকে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্কের পর্যবেক্ষণের সময় দুই বছর হলেও শিশুদের জন্য কেনো এক বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন ডা. ওহোল। এত দ্রুত এত কম বয়সীদের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষার সিদ্ধান্তে তিনি কিছুটা অবাক হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
"এতো কম বয়সী শিশুদের ওপর পরীক্ষা চালানোর আগে আরও বেশি বয়সী শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিশ্চিত হয়ে তারপর এগোনো উচিৎ নয় কী?" প্রশ্ন করেন তিনি।
প্রথমেই কিশোরদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর আরও কম বয়সী শিশুদের ওপর পরীক্ষা চালানোর কথা ভাবছে জনসন অ্যান্ড জনসনও।
ফাইজার ও বায়োএনটেক ১২-১৫ বছর বয়সীদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে, তারপরই এর চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ওপর পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানি দুটির।
গত মাসে ব্রিটেনে ৬ বছর ও তদুর্ধ বয়সী শিশুদের ওপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস