টিকেট, পাসপোর্ট, আর বিদেশ ভ্রমণে লাগবে ভ্যাকসিন কার্ড
গেল বছর চীন থেকে জীবাণু বিস্তারের আতঙ্ক বাধাগ্রস্ত করে আকাশপথে ভ্রমণ শিল্পকে। তারপর অন্যান্য দেশেও করোনাভাইরাসের বিস্তার অচল করে দেয় যাত্রী পরিবহন। এয়ারলাইনগুলো সম্মুখীন হয় বিপুল লোকসানের। তবে, চলতি বছর টিকাদানে গতি আসবে- এমন অবস্থার উপর বাজি ধরে পুনরায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সচল করতে উদ্যমী এয়ারলাইনগুলো।
যাত্রীদের স্বাস্থ্য তথ্য এবং টিকাগ্রহণকে এজন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেমন; ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুটি এয়ারলাইন; ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং রায়ানএয়ার হোল্ডিং পিএলসি যাত্রীদের টিকাদানের তথ্য বা কোভিড পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করছে। টিকেট বুকিংয়ের সময় পাসপোর্ট নাম্বার এবং ভিসা বিবরণের পাশাপাশি তারা জমা নিচ্ছে মেডিকেল রিপোর্ট।
এয়ারলাইনগুলো জানায়, এই পদক্ষেপের ফলে টিকাগ্রহণকারী যাত্রীর সম্পর্কে জানতে পারবেন গন্তব্য দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ফলে এমন যাত্রীরা সেখানে কোনোপ্রকার বাঁধা-বিপত্তির মুখে পড়বেন না। বরং তাদের নিরাপদ ভ্রমণকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। পদক্ষেপটি ভ্রমণের জন্য টিকাগ্রহণের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরবে, ফলে অন্যরাও টিকা নিতে উৎসাহী হবেন।
মহামারিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে, প্রাণহানিতেও বিশ্বের শীর্ষস্থানে আছে দেশটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে টিকাদানে গতি আসার কারণে সেখানে কমেছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের নতুন কেস সংখ্যা। মৃত্যুহারও পড়তির দিকে। ফলে ধীরে ধীরে সচল অবস্থায় ফিরছে স্থানীয় পর্যায়ে আকাশপথে ভ্রমণ।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণে এখনও তেমন যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। অনেক দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, কোয়ারেন্টিন নীতিমালা এবং কোভিড পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার সম্মিলিত প্রভাবেই আন্তঃসীমানা পরিবহনের মন্দা কাটছে না।
কিন্তু, টিকাদান দ্রুতলয়ে চললে আকাশপথে ভ্রমণ যে আপনা থেকেই গতি ফিরে পাবে- তার উজ্জ্বল উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র। এভিয়েশন শিল্প বিশ্লেষক ফার্ম সিরিয়ামের দেওয়া তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের শুরু নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ সেবাদানকারী এয়ারলাইনগুলোর 'শিড্যিউল্ড ক্যাপাসিটি' বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সেই তুলনায় বৈশ্বিক পর্যায়ে সকল রুটে যাত্রীবাহী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি।
টিকাদান ঘিরে নব্য এই উদ্দীপনা ও ইতিবাচক মনোভাব পুঁজি করেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট বিক্রি বাড়াতে চায়- ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, রায়ানএয়ার-সহ অন্যান্য এয়ারলাইন। মহামারিতাড়িত অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে ইউরোপের প্রভাবশালী কিছু দেশের সরকার ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর কথা ভাবছে। এসব দেশে টিকাগ্রহণকারী স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্যে এমন সনদও চালুর চিন্তাভাবনা চলছে, যা দেখিয়ে তারা অনায়সে পানশালা ও রেস্তোরার মতো স্থানে যেতে পারবেন। যোগ দিতে পারবেন দপ্তরের কাজে বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনে।
এয়ারলাইনগুলোর তেমন কড়াকড়ি ব্যবস্থা এখনও নেয়নি। তাদের সাম্প্রতিক চেষ্টা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য। চাহিদামতো কোভিড টেস্টের তথ্য দেওয়া বা টিকাদানের সনদ দেখানো যাত্রীদের জন্য কঠিন হবে না।
তাছাড়া, কিছু দেশ প্রথম পর্যায়ে টিকাগ্রহণকারীদের জন্যে ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে। এই সুযোগটাও নিতে চান অনেকেই। বিভিন্ন দেশের সরকার ও এয়ারলাইনের লক্ষ্য একটাই- মহামারি পরবর্তীকালে আকাশপথে ভ্রমণ যত দ্রুত সম্ভব- সহজ ও সাবলীল করে তোলা। এজন্যেই, যাত্রীদের ভিন দেশের সীমান্তে প্রবেশের সময় বাধা পাওয়ার ভয় দূর করতে এবং এয়ারপোর্টের চেক ইনে বাড়তি সময় কাটানোর দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির দুটি দেশ- গ্রীস ও সাইপ্রাস। যুক্তরাজ্যে টিকাদান আশাব্যঞ্জক গতিতে এগিয়ে চলায়- দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন নথিপত্র দেখাতে সক্ষম ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে চলেছে দেশ দুটি। টিকাপ্রাপ্ত পর্যটকদের বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ পরীক্ষার বিপত্তি থেকে রেহাই দিয়েছে আইসল্যান্ডের সরকার।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনও টিকা নেওয়া বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ বিধি-নিষেধ শিথিলের কথা জানিয়েছে। ইতোমধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ভারত এবং ফিলিপাইনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস টিকা সনদ সত্যায়িত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিনিয়ত এভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ভ্যাকসিন কার্ড। নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে ভবিষ্যৎ ভ্রমণ ব্যবস্থার, যেখানে টিকেট বুকিং থেকে শুরু করে ভিসা প্রাপ্তি এবং ভিনদেশ সফরে ভ্যাকসিন কার্ড হবে অপরিহার্য।
- সূত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল