ঢাকা এসে পৌঁছেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দু'দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।
আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে নেপাল এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় ২১ বার তোপধ্বনির পর বিমানবন্দরে নেপালের রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। গত ১৭ই মার্চ জাতির জনকের জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে এখানে এসেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি ।
পূর্বসূচী অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে সফররত নেপালের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন।
এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন তিনি।
সফরে নেপালের রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিদলে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গেওয়ালি ও পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এরপর আজ দুপুরে নেপালের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী 'নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী' শীর্ষক একটি স্মারক বক্তব্য প্রদান করবেন। সে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও নেপালের শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন রয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় নেপালের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে পৃথক সাক্ষাৎ করবেন।
পরে বঙ্গভবনে নৈশভোজে অংশ নেবেন নেপালের রাষ্ট্রপতি।
নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী বাংলাদেশ সফরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যবসা-বাণিজ্য, কানেক্টিভিটি বাড়ানোসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, দু'দেশের রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হলে, দুই দেশের মধ্যে পর্যটন খাত, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হবে।
তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সবকিছু ঠিক থাকলে এই সফরেই দু'দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা পিটিএ) সই হতে পারে। আগেই দু'দেশ এ বিষয়ে একমত হয়েছে, এর নানা দিক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে নেপাল আকাশ ও সড়কপথে যাতায়াত সহজ করা এবং রেলপথে যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে কানেক্টিভিটি ও ব্যবসা বাড়াতে জোর দিচ্ছে । হিমালয়ের পাদদেশের দেশটি দুই দেশের মধ্যে পর্যটন, জ্বালানি ও নানা ধরনের পণ্যের ব্যবসাও বাড়াতে আগ্রহী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে।
গত কয়েক বছরে নেপাল ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক আলোচনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আকাশপথে সীমাবদ্ধ বাংলাদেশ ও নেপালের যোগাযোগ আরও বাড়াতে চায় দেশটি। ঢাকা কাঠমান্ডু ছাড়িয়ে এর পরিধি চট্টগ্রাম ও সিলেটেও নিয়ে যেতে চায় দেশটি।
নেপাল ২০১৬ সাল থেকে সৈয়দপুর-বিরাটনগর পর্যন্ত আকাশপথে যোগাযোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করছে। সর্বশেষ দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের আলোচনায় নেপাল বিষয়টি সামনে এনেছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সৈয়দপুর থেকে বিরাটনগরের ১৫ থেকে ২০ মিনিটের আকাশপথে চলাচল দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটা বাড়াবে।
বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা হয়ে নেপালের কাকরভিটা এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলেও তৃতীয় দেশের ভিসা নেওয়ার জটিলতার কারণে সড়কপথে দুই দেশের চলাচল সীমিত। ভিসার বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা গেলে সড়কপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়ার সুযোগ রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, ভারতের সঙ্গে রোহানপুর-সিংহাবাদ রুটে সম্প্রতি চালু হওয়া রেল সংযোগ নেপালের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ওই রেলপথে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপালের বিরাটনগরে সরাসরি পৌঁছানো যাবে। তা ছাড়া কলকাতার হলদিয়া বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার ওপর নেপাল এখন বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) নেপালে ফিরে যাবেন রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী।
দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
আগামী ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংও মোদির আগমনের আগেই বাংলাদেশে আসবেন।