‘মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে গেল আমার সাজানো বাগান’
প্রতিদিনের মতো আজও সকাল এসেছিল ফারজানা ইসলামের সংসারে। সকাল সকাল সমস্ত কাজ সেরে ছোট ছেলে আরিফুর রহমানকে পৌঁছে দিয়ে এলেন কেজি স্কুলে। এরপর জলদি জলদি ফিরে এলেন বাড়িতে, বড় ছেলে আতিকুর রহমানকে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে তাঁকে।
ছেলেকে নিয়ে বের হবেন, এমন সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভেঙ্গে পড়লো দেয়াল। মুহূর্তের মধ্যে দেওয়াল চাপায় প্রাণ গেল মা ছেলের। শুধু মা ছেলে নয়, গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ গেল আরও ৭ জনের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে বিলাপ করেছেন সুমনের বাবা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান। তার বুক ফাটা কান্নার চিৎকারে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নেমে এসেছে হতভম্ব শোকের ছায়া। তিনি বলে চলেছেন, "মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে গেল আমার সাজানো বাগান।"
প্রতিদিনের মতো ভোরে দোকান খুলে বসেছিলেন মনজুর হোসেন। তার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন রং মিস্ত্রী নুরুল ইসলাম। ঘড়িতে সময় তখন সাড়ে আটটা। হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চারিদিক। তার দোকানের উপর আছড়ে পড়ে পাশের বিল্ডিংয়ের ভাঙ্গা দেয়াল। তাতেই চাপা পড়ে যায় মনজুর হোসেন, তার দোকান আর চা পানরত নুরুল ইসলামও দেওয়াল চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনায় হতভম্ভ হয়ে পড়েন মনজুর। আশপাশের লোকজন এসে দোকানদার মনজুর হোসেনকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মনজুর হোসেন জানান, “বিকট শব্দ। তার মুহুর্তের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ে দোকানের সামনে অংশ। সামনে বসে যিনি চা খাচ্ছিলেন তার উপর এসে পড়ে দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ। মুহুর্তেই যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে সব কিছু। আমার দোকান পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।”
ঘটনাস্থল পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বাইলেনের মুখে বড়ুয়া বিল্ডিং। ৫ তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের নিচ তলা পুরোটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ওই ভবনের সামনে জনতা ফার্মেসি, ফটো স্টুডিও, একটি চায়ের দোকান সহ অন্তত ৫ টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বড়ুয়া বিল্ডিং এর সামনের ভবনের বাসিন্দা কিশোর চৌধুরী বলেন, “সকাল সাড়ে আটটার দিকে আমি বাসা থেকে বের হয়ে চায়ের দোকানে যাই। সকাল সাড়ে আটটায় দোকানের সামনে অবস্থিত বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই বিকট শব্দ হয়। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গেইটে এসে দেখি লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দুই মিনিট আগে বাসায় না এলে হয়তো কি হতো তা বলার আর ভাষা নেই আমার।”