উখিয়ায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ল ১১ হাজার রোহিঙ্গা বসতি, নিহত ৭
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুই শিশুসহ ৭জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা বসতি ও শতাধিক স্থানীয়দের ঘর পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ সোমবার রাতে জানান, 'রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১১ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইভাবে পুড়ে গেছে শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়িও। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি বিরামহীনভাবে কাজ করছে'।
সূত্রমতে, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ই ও ডাব্লিউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সর্বশেষ রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে গেছে প্রায় ১১ হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গার ঝুপড়ি ঘর। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা 'ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপ- আইএসসিজি'র ক্যাম্পভিত্তিক কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য তৈরি (১৮ জানুয়ারি) একটি ডাটাবেইজের হিসাব অনুসারে জানা গেছে, বালুখালীর ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-তে বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-তে বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, 'রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী কাসেম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের অনেকের স্বজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বাংলাদেশি অন্তত দেড় শতাধিক পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে'।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, 'প্রাণান্ত প্রচেষ্টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা মুশকিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। অন্তত দেড়/দুই কিলোমিটার এলাকা আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে গেছে'।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান রাতে জানিয়েছেন, 'আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ ৭টি ইউনিটকে কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে । এরপরও শুকরিয়া যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে আগুনে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা কঠিন'।
উখিয়ার বালুখালী ৮নং এপিবিএন'র অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছারের মতে, 'আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪নং এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরানো সম্ভব হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদ্রাসা পুড়ে গেছে'।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. হামিদ জানান, 'আগুনে প্রায় ৫ শতাধিক ঘরসহ অন্তত এক হাজারেরও বেশী ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় মার্কেট বালুখালী বলিবাজার। এতে অর্ধ শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের মালামাল পুড়ে গেছে'।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, 'আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে আসছে। তবে, তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা'।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজাও বলেন, 'উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কি পরিমাণ রোহিঙ্গাদের বসতি ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা যায়নি'।
তিনি আরও জানান, 'ক্যাম্পে আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশনের দুইটি ইউনিটের পাশাপাশি টেকনাফের ২টি, কক্সবাজারের ২টি এবং রামুর ১টি ইউনিট ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি'।
এদিকে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাজার হাজার লোক আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে। আশ্রয়হারা লোকজন হারিয়েছে তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরের সব মালামাল। আবার অনেকেই তাদের সন্তান-সন্ততি হারানোর শংকাও করছেন।