মালবাহী জাহাজ আটকে বন্ধ সুয়েজ খাল, উদ্ধারে নেই অগ্রগতি
সুয়েজ খালে মালবাহী জাহাজ আটকে যাওয়ায় লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খালটির দক্ষিণ প্রবেশদ্বারে ক্রমেই বাড়ছে আটকে যাওয়া জাহাজের সংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি বিশ্বজুড়েই জাহাজ চলাচলের সময়সূচীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চলেছে।
জাহাজে পণ্যপরিবহন বিষয়ক সাময়িকী লয়েড'স লিস্টের তথ্যানুসারে, সমুদ্রপথে জাহাজ আটকে যাওয়ায় দৈনিক ৯৬০ কোটি ডলারের পণ্য আটকা পড়ছে। ফলে ঘন্টায় ক্ষতি হচ্ছে ৪০ কোটি ডলার।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ২৩ মার্চ সকালে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে ঝড়ো বাতাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে যাওয়ায় আড়াআড়ি ভাবে সুয়েজ খালে আটকে পড়ে 'এমভি এভার গিভেন' নামের ঐ মালবাহী জাহাজ। ৪০০ মিটার লম্বা এবং ৫০০ মিটার প্রশস্ত জাহাজটির ধারণক্ষমতা দুই লাখ ২০ হাজার টন।
জাহাজটি উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞ জাহাজ উদ্ধারকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান। মিশরের রাষ্ট্রপতির একজন উপদেষ্টা দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন জাহাজ থেকে মালবাহী কন্টেইনারগুলো অপসারণ করতে গেলে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ পণ্যের পরিবহন সুয়েজ খালের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংযোগকারী ১২০ মাইলের খালটি দুই মহাদেশের মাঝে অবস্থিত সবথেকে সংক্ষিপ্ত জলপথ। খালটি উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণে লোহিতসাগর পর্যন্ত সংযোগ সৃষ্টি করেছে।
সুয়েজের বিকল্প পথটি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ অব গুড হোপ উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে এই পথে যাতায়াতে দুই সপ্তাহ বেশি সময় লাগে।
জাহাজটি উদ্ধারে ১০ টি টাগবোটসহ দুইটি ড্রেজার কাজ করছে। অন্যান্য খননকারী যন্ত্র এবং মেশিনারির সাহয্যেও জাহাজটি নড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
শুক্রবার জাহাজটি উদ্ধারের আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বলে জানায় এভার গিভেনের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বার্নহার্ড শাল্ট শিপম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে জাহাজের গলুইয়ের চারপাশ থেকে বালি ও কাঁদা অপসারণের চেষ্টা করছে উদ্ধারকারীরা।
বৃহস্পতিবার উদ্ধারকাজে সহযোগিতায় ঘন্টায় দুই হাজার ঘন মিটার পর্যন্ত কাদা বালি অপসারণক্ষম একটি বিশেষ ড্রেজার নিয়ে আসা হয়। রোববার আরও দুইটি টাগ বোট উদ্ধারকার্যে যোগ দিবে বলে জানা গেছে।
তবে ড্রেজারের মাধ্যমে সম্ভব না হলে, জাহাজ থেকে কারগো ও কনটেইনার সরিয়ে হালকা করা হবে বলে জানান যুক্তরাজ্যের চেম্বার অব শিপিংয়ের চেয়ারম্যান অন ডেনহোম। তবে, এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ বলেও জানান তিনি।
"আমরা জাহাজ খালি করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে, সপ্তাহখানেকের কথা বলা হচ্ছে," বলেন ডেনহোম।
তবে, শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষা না করে এখন বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছে। প্রথম যে জাহাজটি ক্যাপ অব গুড হোপ হয়ে লম্বা পথ পাড়ি দিতে চলেছে তা এভার গিভেনের সহোদর জাহাজ এভার গ্রিট। দুটি জাহাজই তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এভারগ্রিন মেরিন দ্বারা পরিচালিত।
- সূত্র: বিবিসি