২১- ৪৫ বছর বয়সী উদ্যোক্তারাই স্টার্ট-আপ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন
স্টার্ট-আপ ফান্ড থেকে ২১- ৪৫ বছর বয়স্ক উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারাই একটি উদ্যোগ বা প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন। তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
সরল সুদে বাৎসরিক ঋণের সুদহার হবে ৪ শতাংশ। ঋণের মেয়াদ ৫ বছর। প্রতি তিন মাস বা ছয় মাত্র অন্তর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড সর্বোচ্চ ১ বছর।
ঋণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোক্তা ব্যাংকের কাছে কোনো আইডিয়া শেয়ার করলে তার বিপরীতে অর্থায়ন করা হোক বা না হোক ওই আইডিয়া ব্যাংক অন্য কারও কাছে প্রকাশ করতে পারবে না।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত স্টার্ট-আপ ফান্ড নীতিমালায় এসব কথা বলা হয়।
নীতিমালায় স্টার্ট-আপ এর সংজ্ঞায় বলা হয়, স্টার্ট-আপ বলতে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে নতুন পণ্য/সেবা/প্রযুক্তি/প্রক্রিয়া এর উদ্ভাবন ও অগ্রগতিকে বোঝাবে।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবিত সমাধানগুলো বিস্তৃতিযোগ্য, ব্যবসায়িকভাবে টেকসই, বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে হবে যা কর্মসংস্থান তৈরি ও অভ্যন্তরীণ সম্পদকে বাড়াবে।
উদ্যোক্তার প্রস্তাবিত উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন ও সৃজনশীল হতে হবে। আবেনদকারীকে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারি কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা না থাকলে উদ্যোক্তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যোগ পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৫০০ কোটি টাকার স্টার্ট-আপ ফান্ডটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল হিসেবে ব্যবহার হবে।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালন মুনাফা হতে ১ শতাংশ অর্থ আলাদা করে নিয়ে নিজস্ব স্টার্ট-আপ তহবিল গঠন করবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে যে পরিচালন মুনাফা হয়েছে তার ভিত্তিতে ২০২১ সাল থেকেই আগামী ৫ বছর এই ১ শতাংশ অর্থ ব্যাংকগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে।
এতে দুটি স্টার্ট-আপ তহবিল গঠিত হল। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়নে, অন্যটি ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। চলতি বছরের জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল এবং নিজস্ব তহবিল উভয় থেকেই ঋণ দিতে পারবে।
তবে আগামী বছর থেকে ব্যাংকগুলো আগে নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ দিবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল থেকে ঋণ দিবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে ঋণ দিতে হলে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এর সাথে চুক্তি করতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়, একজন উদ্যোক্তা যখন ঋণের জন্য ব্যাংকে তার প্রস্তাব দাখিল করবেন তখন তার বয়স কমপক্ষে ২১ হতে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর হতে হবে। প্রস্তাবিত উদ্যোগের সাথে তাকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হবে।
তিনি ঋণখেলাপি হলে এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন না। একজন গ্রাহক শুধুমাত্র একটি প্রকল্পের জন্য একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। একাধিক প্রকল্প গ্রহণযোগ্য হবে না।
ব্যাংকগুলো ঋণের টাকা একেবারে বিতরণ করতে পারবে না। প্রকল্পের/উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ন্যূনতম ৩টি কিস্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে।
ঋণের জামানত হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কারিগরী প্রশিক্ষণের সনদ দিতে হবে। এছাড়া লাগবে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তির অঙ্গীকারনামা নিতে হবে। তবে দুজনের বেশি গ্যারান্টার থাকতে পারবে না।
ব্যাংকগুলো প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো যথাযথ ভাবে মূল্যায়নের পরই ঋণ প্রদান করতে পারবে। প্রতি বছরের জুন ও ডিসেম্বর মাসে এই ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।
ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব তহবিল এর জন্য আলাদা একটি নীতিমালা করতে হবে এবং এই নীতিমালা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হতে হবে।
যদি কোন উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাকে বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় ঋণ শ্রেণিকরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড মানে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ, সন্দেহজনক মানে ২০ শতাংশ এবং মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হলে ৩০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে।