চট্টগ্রামের সেই ম্যাক্স হাসপাতালে আবারও ‘অবহেলায়’ শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নার্স-চিকিৎসকদের অবহেলায়, গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসায় ১৩ মাস বয়সী শিশু সন্তান জিহান সারোয়ার প্রিয়র মৃত্যুর অভিযোগ এনেছেন তার মা।
রোববার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বরাবরে দেয়া লিখিত অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার দাবি করেন ওই শিশুর মা নগরীর লালখান বাজারের বাসিন্দা মোহছেনা আকতার ঝর্ণা।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৮ জুন রাফিদা খান রাইফা নামে চার বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ওঠে। ঘটনার পর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি রাইফার মৃত্যু ‘অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ ঘটনায় রাইফার বাবা রুবেল খান জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযোগে মোহছেনা আকতার ঝর্ণা বলেন, গত ১৭ নভেম্বর তার এক বছর ২৪ দিন বয়সী প্রিয় অসুস্থ বোধ করলে তাকে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করাই। ভর্তির পর অনকলে চিকিৎসক সনৎ কুমার বড়ুয়াকে দেখালে তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এরপরই ম্যাক্স হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এনআইসিইউর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই।
তিনি বলেন, গত ২১ নভেম্বর দুপুরে আমার সন্তানকে মেশিনের মাধ্যমে ধীরে ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও অনভিজ্ঞ নার্স ওই ওষুধের শেষের অংশ হাত দিয়ে পুশ করেন। আর তখনই আমার সন্তান পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়।
ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার চারদিনের প্রায় সময়ই নার্স, আয়া ও চিকিৎসকদের অবহেলার স্বীকার হয়েছেন উল্লেখ করে মোহছেনা ঝর্ণা বলেন, বিভিন্ন সময়ে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে দিতে পারেনি। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ নার্সরা ডিউটিতে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ডাকলে উল্টো বকা শুনতে হয়।
এছাড়া তার সন্তানের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দেখতে দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আমার সন্তানের চিকিৎসার বিস্তারিত তারা আমাদের দেয়নি। তারা যে ওষুধ আমার সন্তানকে দিয়েছে তার মেয়াদ ছিলো কি না তাও আমরা জানি না।
ওই মা অভিযোগ করে বলেন, রোগীদের সুচিকিৎসায় তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এসব কারণে আমার সন্তানের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন এবং ম্যাক্স হাসপাতালের প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করা হবে। চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি, ত্রুটি বা অবহেলা হয় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ ওঠার পর ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, ওই শিশুকে নিয়ম মেনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিশুটি মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত ছিল। এ ধরনের রোগী যে কোনো সময় খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল না।