মহামারির মধ্যেই ভারতীয় নারীদের গৃহস্থালি কাজে মজুরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন রাজনীতিকরা
করোনা মহামারিতে সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ চলছে প্রতিবেশী ভারতে, এরমধ্যেই আবার গুরুত্বপুর্ণ কিছু রাজ্যের নির্বাচন, যেখানে জয়লাভ করতে নারী ভোটারদের আকর্ষণের নতুন কৌশল নিয়েছেন ভারতীয় রাজনীতিকরা। দিচ্ছেন নারীদের গৃহস্থালি কাজের জন্য মাসিক মজুরির প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী এই ওয়াদা নজিরবিহীনও বটে।
এই উদ্যোগ পাস হয়ে আইনে রূপ নিলে সেটা হবে বৈশ্বিক পর্যায়ে নারীদের অবৈতনিক কাজকে আর্থিক মূল্যদানের প্রথম চেষ্টাগুলোর একটি। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নারীরা কোনো প্রকার মূল্য ছাড়াই যে গৃহস্থালি কাজগুলো করেন তা মোট বৈশ্বিক জিডিপির ৩৯ শতাংশ, অধিকাংশ সময়েই আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে এর গুরুত্ব এড়িয়ে যাওয়া হয় বলে জানা যায় ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন সূত্রে।
ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীর ওপর থাকে সিংহভাগ গৃহস্থালি কাজের চাপ, যেকারণে ঘরের বাইরে কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ হার পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম কম পর্যায়ে, অর্থাৎ সংসারের অতিরিক্ত কাজের চাপে তারা আয়-রোজগার এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার সুযোগ হারান। মাহামারিতে নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ আরও কমেছে।
ভারতে চলমান সংক্রমণের প্রকোপ এমন ভয়াবহ যাতে বড় বড় শহরের হাসপাতালগুলোরও নাজেহাল দশা, এতে পুরুষের তুলনায় নারীদের ক্ষতিটাই বেশি হচ্ছে।
গেল বছর ভারতজুড়ে জাতীয় লকডাউন শেষে অনেক ব্যক্তি জানান, এতে তাদের আয়ের একটি বড় অংশ বা কারো কারো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। একইসময়, বেকার পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে আসায় নারীর ওপর গৃহস্থালি কাজের চাপও নাটকীয় হারে বাড়ে।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচন হচ্ছে পাঁচটি রাজ্যে, এরমধ্যে আগামী রোববার ভোট গণণা হবে দক্ষিণের তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুডুচেরিতে, এসব অঞ্চলের ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল উভয়পক্ষের প্রার্থীরাই গৃহবধূদের মাসিক আয় সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভারতের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টি আসাম এবং কেরালার গৃহবধূদের মাসিক ২,০০০ রুপি ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
অন্যদিকে, আরেক নির্বাচনী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয়েই রাজ্যের এক কোটি ৬০ লাখ পরিবারের নারী গৃহকত্রীদের মাথাপিছু ১,০০০ রুপি মাসিক আয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আগামী বৃহস্পতিবার এই রাজ্যে চূড়ান্ত দফার ভোটগ্রহণ শেষে, নির্বাচনী ফলাফল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে।
প্রগতিশীল বিকল্প:
নরেন্দ্র মোদির সর্ব ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের গণতান্ত্রিক বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রচার করে মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। এজন্য ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর লিঙ্গ সমতা এবং সামাজিক বিচার প্রতিষ্ঠার একাধিক পদক্ষেপ নেয় তৃণমূল সরকার।
গৃহবধূদের জন্য বিজেপির এমন কল্যাণ নীতি না থাকলেও, তাদের আকৃষ্ট করার জন্য দলটির রয়েছে বিনামূল্যে নারী শিশুদের শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে কোটা বরাদ্দের মতো বেশকিছু কর্মসূচি।
এব্যাপারে লন্ডন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার এবং গবেষণা প্লাটফর্ম 'আইডিয়াস ফর ইন্ডিয়ার' ম্যানেজিং এডিটর নলিনী গুলাটি বলেন, "সংরক্ষণবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মনোভাবের বাধা ভেদ করতে প্রগতিশীল পদক্ষেপ ধীরগতির হয়, কিন্তু মনে রাখা দরকার এভাবে আসা ছোট ছোট পরিবর্তনও এক সময় আরও বড় রকমের অগ্রগতির সূচনা করবে।"
"রাজ্য সরকারগুলোর দেওয়া মাসিক আয় সহায়তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে মহামারিতে আর্থিক সঙ্কটে পড়া মানুষের হাতে কিছু নগদ টাকা আসবে, যা দিয়ে তারা নিজেদের অসম্পূর্ণ নিত্য চাহিদা মেটাতে পারবেন। তাই সার্বিকভাবে এই সক্ষমতা অর্থনীতিতেও চাহিদা তৈরিতে সাহায্য করবে," নলিনী বলেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ আকৃষ্ট করে বিশ্বে নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চান, তাই এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির জন্য নারীর আর্থ-সামাজিক উত্তরণ এক আবশ্যক শর্ত। ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এক গবেষণায় বলা হয়, ভারতীয় অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের সম-পর্যায়ের করা গেলে, দেশটির জিডিপি ২৭ শতাংশ বাড়বে।