দেশে ফিরে আসা ৪৭ শতাংশ প্রবাসীর কোনো আয়ের উৎস নেই: ব্র্যাকের জরিপ
কোভিড-১৯ অতিমারির কারণ দেশে ফিরে আসা ৪৭.২৩ শতাংশ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর বর্তমান কোনো আয়ের উৎস নেই। ফলে বাধ্য হয়েই তারা পরিবারের অন্য সদস্যের আয়ের ওপর নির্ভর করছেন, নাহলে আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য নিয়ে চলছেন। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় করুণ এ দৃশ্য উঠে আসে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫২.৭৭ শতাংশ বলেছেন, তারা কোনো রকমে একটি কাজ খুঁজে পেয়েছেন। এদের মধ্যে ২৪.১৯ শতাংশ কৃষিখাতে যুক্ত হয়েছেন, ২২.৩৩ শতাংশ দিনমজদুরি করছেন, ৩৫.৩৫ শতাংশ শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা আর ১৭.৬৭ শতাংশ অন্যান্য চাকরি করছেন।
চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় দেশের ৩০টি জেলায় ৪১৭ জন বিদেশ ফেরত কর্মীর মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়। এদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ৩১-৩৫ বছরের মধ্যে। বিদেশ থেকে ফেরার এক বছর পর সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রবাসী কর্মীদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহারাইন, ওমান এবং কুয়েতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসেন। বাকিরা এসেছেন যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে।
দেশে ফিরে আসার পর এসব জনগোষ্ঠী মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক এই তিন ধরনের সমস্যাতেই ভুগছেন বলে জরিপের ফলাফলে উঠে আসে। ওই সূত্র জানা যায়, ২৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই বর্তমানে দেনাগ্রস্ত, অবশ্য ৭২ শতাংশকে কোনো দেনা করতে হয়নি।
ধারদেনা করতে বাধ্য হওয়া ২৮ শতাংশের মধ্যে ৬১.৯৫ শতাংশ বাংলাদেশে আসার পর ঋণ নেন, এরমধ্যে ২৫.০৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই তাদের দেনা শোধ করেছেন।
ফেরত আসার এক বছর পর তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি নিয়ে আরও বেশি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন।
পুনঃঅভিবাসনের ইচ্ছা:
৪১৭ জনের ৭২ শতাংশই আবার বিদেশ যেতে চান, এদের ৮৯ শতাংশ ছিলেন গ্রামে বসবাস করেন আর ১১ শতাংশ শহরবাসী।
অন্যদিকে, ২৮ শতাংশ ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই বলেও জানান।
অপেক্ষাকৃত তরুণ ২৬-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেই পুনঃঅভিবাসনের ইচ্ছে বেশি, যা প্রায় ৮৪ শতাংশ।
মানসিক উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি:
প্রতিবেদনে প্রবাসীদের বর্তমান মানসিক অবস্থাও উঠে আসে। গতবছর অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তারা ভবিষ্যত নিয়ে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু এবার ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, অপর্যাপ্ত আয়, বেকারত্ব, পুনরায় বিদেশ যেতে না পারা, পারিবারিক চাপ ইত্যাদির কারণে চরম উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।
ফেরত আসা প্রবাসীরা বলছেন, ৭১ শতাংশই প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন। তবে ২৯ শতাংশ জানিয়েছে তারা তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতামূলক আচরণ পাননি।
কোভিড শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের এপ্রিল পযর্ন্ত প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে ফিরেছেন আতঙ্কে, অনেক ফিরেছেন চাকরি হারিয়ে, কেউ ফিরেছেন স্থায়ীভাবে আবার কেউ বা কেবল ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৫% শতাংশ ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ১৯ শতাশ বলেছেন, তারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১৬ শতাংশ বলছেন তারা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১২ শতাংশ বলেছেন, তারা একেবারেই চলে এসেছেন এবং ২ শতাংশ অসুস্থতার কারণে ফিরেছেন।
বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে আছেন। কোভিডের মধ্যেও ২০২০ সালে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ বছরের প্রথম তিনমাসে দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কাজ নিয়ে গেছেন। ব্র্যাক গবেষকরা মনে করছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থান স্বাভাবিক করার পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবার সমন্বিতভাব কাজ করা উচিত।