আমদানি বাড়ায় কমছে চলতি হিসাবের লেনদেনের উদ্বৃত্ত
বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবের লেনদেনের উদ্বৃত্ত (কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স) মার্চে এসে ব্যাপক কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে জুলাই-মার্চ সময়ে উদ্বৃত্ত কমে দাঁড়িয়েছে ১২৫ মিলিয়ন ডলার। যেখানে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ছিল ১.৩৬ বিলিয়ন ডলার।
যদিও গেল অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স এ কোন উদ্বৃত্ত ছিল না। বরং ২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল। গেল অর্থবছরের প্রথম প্রায় নয় মাস করোনার প্রকোপ না থাকায় স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকায় আমদানি বাড়ায় ব্যালেন্সে ঘাটতি ছিল।
তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই করোনার ধাক্কায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ায় আমদানি হ্রাস পায়। এর প্রভাবে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়ে যায়।
গেল অক্টোবর থেকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় চাহিদা বাড়তে থাকে। এর প্রভাবে শিল্পে উৎপাদন বাড়ায় আমদানিও বৃদ্ধি পায়। মার্চ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় আমদানি বৃদ্ধির প্রভাবে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স এর উদ্বৃত্ত এত কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, জুলাই-মার্চ সময়ে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ৬ শতাংশ বেড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২.৭৬ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকারের চাল আমদানি বাড়ানোর ব্যয়। এছাড়া অপরিশোধিত তেলসহ শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহার করা মধ্যবর্তী কাঁচামালের আমদানিও অনেক বেড়েছে।
জুলাই-মার্চ এই নয় মাসে চাল আমদানি বাবদ সরকার প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি ৪.৩৯ শতাংশ বেড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৮৬ বিলিয়ন ডলার।
শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের মধ্যে সিমেন্টের ক্লিংকার আমদানি কমেছে। তবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি জুলাই-মার্চ সময়ে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য সব কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে।
তবে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান সূচক মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই-মার্চ সময়ে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই খাতে আমদানি কমেছে ১২.৭৬ শতাংশ।
এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়নি। জুলাই-মার্চ এই নয় মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৯৪৮ মিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম। এদিকে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ তো হয়নি, উল্টো তারা ২২২ মিলিয়ন ডলার বাজার থেকে তুলে নিয়েছেন।
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ সত্ত্বেও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে যেখানে রিজার্ভের স্থিতি ছিল ৪৪.০২ বিলিয়ন ডলার, এক মাসের ব্যবধানে জুলাই-মার্চ সময়ে তা কমে হয়েছে ৪৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার।