রাজাকারের তালিকার খরচ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি ডা. মনীষার
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের পর তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টির পর তা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। তবে এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর এসেছে ওই তালিকায় তৈরিতে ৬০ কোটি টাকা খরচ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে তা অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তালিকা তৈরির পেছনে এক টাকাও খরচ করেনি তার মন্ত্রণালয়।
এদিকে ‘পেনড্রাইভ থেকে হুবহু তুলে ধরা রাজাকারের তালিকার’ জন্য ৬০ কোটি টাকা কীভাবে কোথায় খরচ হয়েছে তার শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসদ বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
সদ্যঘোষিত রাজাকারের ওই তালিকায় নাম এসেছিল, মনীষার মুক্তিযোদ্ধা বাবা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী ও তার ঠাকুরমা উষা রানী চক্রবর্তীর। এঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে প্রকাশ্যেই রাজাকারের ওই তালিকা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মনীষা বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকা তৈরিতে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রতিপক্ষকে হেয় করার মানসিকতায় আজ পুরো জাতি স্তব্ধ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী যদি পূর্বেরই কোন তালিকা একটা পেনড্রাইভে দেয়া হয় এবং তা হুবহু তুলে ধরা হয়, তাহলে এই তালিকার জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি টাকা কীভাবে-কোথায় খরচ হলো তার শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
তিনি বলেন, লুটপাট-দুর্নীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে আগের মতো সময়ক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেয়া যাবে না। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দেয়া না হলে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুক্ত করে গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন করা না হলে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ ও তালিকা স্থগিতে আমরা ক্ষান্ত হবো না। লড়াইয়ের মাধ্যমেই আমরা দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবো।
নগরীর ফকিরবাড়ি রোড দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, রাজাকারের তালিকা বাতিল না করে স্থগিত করে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য রাজাকার তালিকা থেকে নাম কাটানোর আবেদন করা চরম লজ্জা আর অপমানের বিষয়। তাদের কোনভাবেই আর অপমান করা যাবে না। তাই রাজাকারের তালিকা স্থগিত নয়, বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কর্মকাণ্ডের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের পদত্যাগের দাবি করেন তিনি।
মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন অবশ্যই জরুরি। রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করতে আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে। এখনও গ্রাম-শহরে অনেক মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা অনেক বয়স্ক মানুষও বেঁচে রয়েছেন। দল-মত নির্বিশেষে প্রথমে কমিশন এধরনের মানুষদের যুক্ত করে সারাদেশের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে তা যাচাই-বাচাইয়ের জন্য জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এরপর আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকতে হবে খসড়া তালিকার ওপর। পরবর্তীতে সেগুলো তদন্ত করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। কোনভাবেই আমলা বা দল নির্ভর তালিকা গ্রহণযোগ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাসদের জেলা আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমন, রিক্সা-ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফন্ট্রের সভাপতি সন্তু মিত্র, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সহসভাপতি মাফিয়া বেগমসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।