বিরোধীদের জোট সরকার রুখে দেওয়ার শেষ চেষ্টায় ব্যস্ত নেতানিয়াহু
টানা ১২ বছর ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর পদ নিজের দখলে রেখেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। লড়াই ছাড়া তিনি ক্ষমতা ছাড়তেও চান না। সে জন্যেই তাকে সরানোর জন্য বিরোধী দলগুলো যে জোট গঠন করেছে তা বানচালের চেষ্টা করছেন তিনি।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলি পার্লামেন্ট- নেসেটের ডানপন্থী সদস্যদের প্রতি নতুন এই জোটকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এর আগে বুধবার (স্থানীয় সময়) ইসরায়লের আটটি বিরোধী দল নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে ঐক্যমত্যে পৌঁছায়। কিন্তু, ইসরায়লের নানা ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর জোট পার্লামেন্টের সমর্থন পেলেই বৈধতা পাবে। আর সেখানেই তাদের আটকানোর উপায় দেখছেন নেতানিয়াহু।
কোয়ালিশন ঘোষণার পর করা প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই নেতানিয়াহু নেসেটের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আপনারা যারা ডানপন্থী ভোটারদের সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদেরকে অবশ্যই এই জোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।"
সামাজিক মাধ্যম টুইটারে করা পোষ্টে তিনি এই জোটকে 'বামপন্থী' ও 'বিপজ্জনক' বলে উল্লেখ করেন। ইতঃপূর্বে, নেতানিয়াহু বিরোধীদের প্রস্তাবিত সরকারকে 'শতাব্দীর সেরা জালিয়াতি' মন্তব্য করে বলেন, এই জোট ইসরায়েল রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে।
গেল মার্চের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি। নেতানিয়াহু পরবর্তীতে নিজস্ব জোট গঠনেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। কিন্তু, বিরোধী দলের এহেন জোট গঠনে ক্ষমতা তিনি নিশ্চিতভাবেই হারাতে পারেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই অবস্থায় নেতানিয়াহু জোটটির প্রয়োজনীয় সমর্থন লাভের রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
নতুন জোট গঠনে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন মধ্যপন্থী ইয়েশ আতিদ দলের প্রধান ইয়ার লাপিদ। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তাকে পার্লামেন্টের আস্থা ভোটে জিততে হবে। সাংবিধানিক এই প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে সেই সময়সীমা এখনও জানা যায়নি। তার আগেই জোটের অনেক আইনপ্রণেতা স্বপক্ষ ত্যাগ করলে জোটটি ভেঙ্গেও যেতে পারে।
মার্চের নির্বাচনে লাপিদের দল দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। তিনি বুধবার রাতে প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনকে ফোন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট গঠনের সংবাদ দেন।
তিনি বলেন, "আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, এই সরকার ইসরায়েলের সব নাগরিকের জন্য কাজ করবে। কারা ভোট দিয়েছেন, আর কারা ভোট দেননি, এমন কোনো ভেদাভেদ করা হবে না। বিরোধীদের সম্মান করা হবে এবং ইসরায়েলি সমাজের সকল অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।"
তবে লাপিদ প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না। কট্টর ডানপন্থী ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে করা তার সমঝোতা অনুযায়ী প্রথম দুই বছর (২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত) বেনেট প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, তারপর আবার লাপিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন তিনি।
নতুন জোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাস বহুভাগে বিভক্ত, এক নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যও অনেক ভিন্ন। তবে জোট সফল হলে এবারই প্রথম আরব-ইসরায়লি একটি দল সরকারের অংশ হবে।
ইসরায়েলের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে নতুন কোয়ালিশনের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় লাপিদ, বেনেটসহ আরব-ইসরায়েলি রাম পার্টির নেতা মনসুর আব্বাসকে দেখা যায়।