রোদের ঘ্রাণ আর বাতাসের রঙ
০১৮. দলাদলির দিন গলাগলির দিন
শেষ বিকেলে যখন বাড়ি ফেরার পালা আসলো তখন আমাদের দলনেতা সবাইকে গোনাগুনতি করে বাসে তুলতে লাগলেন। দেখা গেল ঐ বালিকা ও আমাদের এক 'বড় ভাই' নিখোঁজ। আমি মোটা বুদ্ধির মানুষ বলে যে কথাটা বুঝতে অনেক বছর লেগে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে - বালিকাটি আমাকে পছন্দ করতো না।
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন একদিন খবর পাওয়া গেলো এক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর তিনজন ছাত্র নিখোঁজ। সেসময় 'ছেলেধরা'র উপদ্রব বেশ বেড়ে গিয়েছিল, তাই প্রথমে সবার ধারণা হলো যে তাদেরকেও বুঝি কোন অপহরণকারীদের দল তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশে খবর দেয়া হলো, পুলিশ তৎক্ষণাত খোঁজখবর শুরু করলো। খোঁজ নিতে জানা গেলো নিখোঁজ তিন বালক মোটেও অপহরণের শিকার নয়। তারা স্বেচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে 'টারজান' হবার আশায়। সেসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার সন্ধ্যায় রন এলি অভিনীত 'টারজান' সিরিজ দেখানো হচ্ছে, যেখানে 'জেন' নামে কোন চরিত্র নেই, যেটা আফ্রিকার বদলে ব্রাজিল আর মেক্সিকোতে চিত্রায়িত।
জনি ওয়েসমুলার অভিনীত টারজান সিরিজ দেখতে তখনো আমাদের আরও কয়েক বছর বাকি। পুলিশ দুদিন পরেই চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। শোনা গেলো সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব থাকায় আর হাতি না থাকায় তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে টারজান হবার উপযুক্ত জায়গা বলে মনে করেছিল। ঐসময়ে আমাদের একটা প্রিয় খেলা ছিল 'টারজান টারজান' খেলা। সেটা আর কিছু না, কোন গাছের ডালে একটা মোটা দড়ি বেঁধে সেটা ধরে ঝোলা আর টারজানের মতো করে ডাক দেয়া। এরচেয়ে বেশি কিছু করার সাহস বা ক্ষমতা আমাদের ছিল না। টারজান হবার মতো লী মেজর্সের 'সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান' বা লিন্ডসে ওয়েগনারের 'বায়োনিক ওম্যান' সিরিজ দেখেও কারো কারো অমন বিশেষ ক্ষমতাধর হবার ইচ্ছে হতো। তাদের মতো নিচু জায়গা থেকে লাফ দিয়ে অনেক উঁচুতে কোথাও ওঠার ক্ষমতা কারো ছিল না বলে কেউ কেউ তার উল্টোটা করার চেষ্টা করেছিল। এর ফলে কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে, এবং এভাবে কিছু শিশু প্রাণ হারায়।
পত্রিকায় আমরা সেসব হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা পড়েছি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় আমাদের ক্লাসের মাহদী চারতলার ছাদ থেকে ছাতা খুলে লাফ দিয়েছিল। ভাগ্যিস ছাতাটা প্যারাস্যুটের কাজ করেছিল তাই মাহদী প্রাণে বেঁচে যায়। এভাবে প্যাট্রিক ডাফি'র 'ম্যান ফ্রম আটলান্টিস' দেখে আমরা পুকুরে ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ থাকার পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে সেকেন্ড ত্রিশেকের মধ্যে ভেসে উঠতাম। তখনো প্যাট্রিক ডাফিকে আমরা 'ডালাস' সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র ববি ইউয়িং হিসাবে দেখিনি, কারণ 'ডালাস' বড়দের সিরিজ ছোটদের দেখা বারণ। এর প্রায় এক দশক পরে দেখানো অস্ট্রেলিয়ান সিরিজ 'রিটার্ন টু এডেন'ও ছোটদের দেখা বারণ ছিল, আমি অবশ্য ততদিনে বড় হয়ে গেছি। যে সময়ের কথা বলছি তখন আমরা বিবিসি'র 'ডক্টর হু' সিরিজ দেখে ভয় পেতাম, জেমস বন্ড রজার মুরের 'দ্য সেইন্ট' বা আয়ান অগিলভি'র 'রিটার্ন অব দ্য সেইন্ট' দেখে মুগ্ধ হতাম, রবার্ট পাইন আর এরিক এস্ত্রাদা'র 'চিপস্' দেখে অমন করে মোটর সাইকেল চালানোর স্বপ্ন দেখতাম, 'প্রজেক্ট ইউ এফ ও' দেখে রাতের আকাশে মুখোমুখি লাগানো দুটো হ্যাটের আকারের ইউএফও খুঁজতাম। আমরা সরল বা ঐকিক নিয়মের অঙ্ক করার ফাঁকে ফাঁকে খাতার সাদা জায়গায় মাথার উপরে আলোকচক্রসহ দ্য সেইন্টের রেখাচিত্র আঁকতাম, ইংলিশ হাতের লেখা খাতার উপরে ছোট বড় হরফ মিলিয়ে CHiPs লিখতাম।
এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে ঐসময়ে টেলিভিশন আমাদেরকে গ্রাস করেছিল। তখন একটা মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল, তাও চলতো বিকাল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। সারা দিনে ঘরের বাইরে আমাদের স্কুলে যাওয়া, খেলা, ছুটোছুটি, ঝগড়া, সাঁতার কাটা, বেড়ানো এমন বহু কিছু করার ছিল। আমরা নিয়মিত ছোট মাঠে ছোট গোলবারে 'ডিগবল' টুর্নামেন্ট আয়োজন করতাম যেখানে ছোট পকেট চিরুনী পুরস্কার হিসাবে থাকত। আমরা পাড়ার অপেক্ষাকৃত চওড়া রাস্তায় কাবাডি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতাম যেখানে ছোট হাত আয়না পুরস্কার হিসাবে থাকত। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বা সদ্য পড়া শেষ করা বেকার যুবকেরা আমাদের নিয়ে সমাজকল্যান, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিষয়ক নানা রকমের সংগঠন করতেন। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ছোটদের জন্য যে সাপ্তাহিক পাতাটি থাকতো সেটার ওপর ভিত্তি করেও ছোটদের জাতীয় সংগঠন ছিল। যেমন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের 'কচি কাঁচার মেলা' (ইত্তেফাক ভিত্তিক), রফিকুল হক দাদুভাইয়ের 'চাঁদের হাট' (কিশোর বাংলা ভিত্তিক)। দেশজুড়ে খেলাঘর আসরের (সংবাদ ভিত্তিক) খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল। আমাদের পাড়ায় বড়রা আমাদের জন্য চাঁদের হাটের শাখা খুলেছিলেন। দাদুভাই নিজে এসে উদ্বোধন করেছিলেন, সাথে এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক আলী ইমাম। 'অপারেশন কাঁকনপুর' আর 'নীলডুংরির আতঙ্ক' পড়ে আমরা তখন আলী ইমামের পাগল ভক্ত! দাদুভাই যখন বসে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখছিলেন আমি তখন ভয়ে ভয়ে তাঁর কাছে গিয়ে একটা খাতা বাড়িয়ে ধরে বললাম, 'অটোগ্রাফ চাই'। দাদুভাই আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। নাম শুনে তিনি কয়েক সেকেন্ড একটু ভাবলেন তারপর সবুজ কালির কলমে খসখস করে লিখলেন —
আ – আজকে আরিফের সাথে হলো দেখা
রি – রিক্ততা নেই রীতিমতো কিছু কথা লেখা
ফ – ফট্ করে আরিফ তো হয়ে গেলো মিতে
প্রীতি ছাড়া আর কিছু পারবোনা ভাই দিতে
মঞ্চে তখন নতুন কুঁড়ির শিল্পী জাদুকর আহসান ভাই মজার অভিনয় করে যাচ্ছেন, কিন্তু খুশি আর গর্বের চোটে আহসান ভাইয়ের বলা সংলাপ আমার কানে আর ঢুকছে না। চাঁদের হাট নিয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডের শেষ ছিল না — সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাহিত্য সংকলন, ফুটবল টুর্নামেন্ট, পিকনিক, ইফতার পার্টি, বাংলা ব্যাকরণ আর ইংলিশ গ্রামারের ক্লাস অনিঃশেষ এক তালিকা। তখন জাতীয় জাদুঘর নিমতলী থেকে শাহ্বাগে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে আবার নতুন শিশু পার্ক চালু করা হয়েছে। আমাদের চাঁদের হাট থেকে ঠিক করা হলো আমদের সবাইকে নিয়ে এই দুই জায়গায় যাওয়া হবে। জাদুঘর যেমন তেমন শিশু পার্ক দেখার জন্য আমরা তখন উদগ্রীব। আলোচনায় ঠিক হলো এই দুই জায়গার সাথে চিড়িয়াখানাও যুক্ত হবে। ব্যাস, আমাদের আনন্দ দেখে কে! এক রবিবার সকালে খোকন মামা, ডেভিড মামা, মিল্টন মামা, শাহ আলম ভাইরা একটা তিন টনের ট্রাকে আমাদেরকে তুলে নিমতলীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আমাদের বাস ভাড়া করার মতো পয়সা ছিলো না বলে ট্রাক ভাড়া করা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় সংগঠক মাহফুজ ভাই ব্যবসায়িক কাজে আমাদের সাথে যোগ দিতে না পারায় আমাদের বেশ মন খারাপ ছিল। নিমতলী জাদুঘরে তখন বিশেষ কিছু ছিল না, সেটা দেখে আমাদের মন আরও খারাপ হয়। শাহবাগের নতুন বিশাল জাদুঘরে এসে আমাদের মন ভালো হতে শুরু করে। এই জাদুঘরে এসে গাইডের কাছে শিখলাম দেবতাদের বাহন থাকে – যেমন, ব্রহ্মার বাহন হংস, বিষ্ণুর গরুড় নামের পৌরাণিক পাখি আর মহাদেবের নন্দী নামের ষাঁড়। এর আগে দুর্গাপূজায় ঠাকুরদের বাহন দেখেছিলাম বটে কিন্তু তার ব্যাখ্যা জানতাম না। জাদুঘরে দেখার পরে লাল মাটির উঁচু-নিচুর মধ্য দিয়ে চলা কালো অ্যাসফল্টের রাস্তা ধরে মিরপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে আমাদের আনন্দ দেখে কে! আমরা যেন পথ না হারাই এজন্য খোকন মামা চিড়িয়াখানার অফিস থেকে একটা মানচিত্র নিয়ে আসলেন। আমাদের পশুপাখি দেখা শেষ হলে সবাই পালা করে ঘোড়া আর হাতির পিঠে চড়লাম। মডার্ন ব্রেডের ছোট ব্রেড রোলের সাথে সেদ্ধ ডিম আর কলা দিয়ে সেদিন দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম, কিন্তু এ'নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন অসন্তোষ ছিল না। বিকালে আমাদের ট্রাকটা যখন শিশু পার্কের সামনে এসে থামলো তখন আমরা সত্যি সত্যি উল্লাসে চীৎকার দিয়ে উঠলাম। ভেতরে ঢুকে কেউ ছুটলো ট্রেনে চড়তে, কেউ নাগরদোলা, কেউ ঝুলন্ত চেয়ার, কেউ 'আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী' (মেরি-গো-রাউন্ড), কেউ আনন্দ ঘুর্ণিতে চড়তে। আমি ছুটলাম ছোট গাড়ি চালানোদের দলের সাথে। যাদের সাহস বেশি তারা রোলার স্কেটস পরে ছুটল বা ট্রাম্পোলিনে লাফালাফি করল। না বুঝে যারা 'ফুলের আমেজ' নামের একটা জিনিস যেখানে একসাথে তিন রকমের ঘুর্ণন কাজ করে সেটাতে চড়েছিল তারা মাথা চক্কর খেয়ে অনেকক্ষণ ঘাসে বসেছিল। সন্ধ্যায় ট্রাকটা যখন উল্লসিত আমাদেরকে নিয়ে পাড়ায় ঢুকছিল তখন দেখি আমাদের মা-বাবারা উৎকণ্ঠিত মুখে রাস্তায় ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছেন।
সারা বছর বিশেষ কিছু হোক বা না হোক তিনটি বিশেষ দিনে আমাদের পাড়ার বড়রা ছোটদেরকে নিয়ে অবশ্যই আনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন — শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবস। বিশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাড়ার সবার বাসা থেকে ফুল জোগাড় করে পুষ্পস্তবক বানানো হতো। তখন সবার বাসায় কিছু না কিছু ফুলের গাছ থাকতো, ফলে ফুল জোগাড় করা কঠিন কিছু হতো না। সাদা কাপড়ে কালো কালি দিয়ে 'শহীদ দিবস অমর হোক' লিখে ব্যানার বানানো হতো। একুশের ভোরে আমরা খালি পায়ে প্রভাত ফেরীতে হাজির হতাম। সামনে ব্যানার, মাঝখানে পুষ্পস্তবক, বড়দের একজনের গলায় গামছা দিয়ে একটা হারমোনিয়াম বাঁধা, দুই পাশে দুই সারিতে আমরা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গাইতে গাইতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতাম। মিনারে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়ে গেলে রাস্তার একটা ফাঁকা আইল্যান্ডে জড়ো হয়ে একুশের গান গাওয়া হতো। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো', 'আটই ফাল্গুনের কথা আমরা শোনাই মা', 'কাইন্দো না বরকতের মা' এমনসব গান অথবা 'কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা'র আবৃত্তি। স্বাধীনতা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো যার রিহার্সাল চলতো প্রায় এক মাস ধরে। একেক বছর পাড়ার একেক জনের বাসায় রিহার্সাল চলত। একথা এখন কেউ ভাবতে পারবেন না একদল ছেলেমেয়ে প্রতিদিন একটা বাসার ড্রইংরুম আর বাইরের বারান্দা দখল করে কয়েক ঘন্টা ধরে গান, নাচ, আবৃত্তি, একাঙ্কিকার রিহার্সাল দিয়ে যাচ্ছে। ছাব্বিশে মার্চ সন্ধ্যায় সোমা পালদের 'প্রিন্স ডেকোরেটর' থেকে আনা সরঞ্জাম দিয়ে বানানো মঞ্চের অনুজ্জ্বল আলোয় আমরা কী অনুষ্ঠান করতাম তারচেয়ে ঢেড় বেশি উত্তেজনার ছিল মাসব্যাপী এই রিহার্সাল। দুয়েকটা একক গান বা ডুয়েট ছাড়া বাকি সব গান ছিল কোরাস। 'আমরা সবাই রাজা', 'আমার ছয়টি ঋতু দাও ফিরিয়ে', 'এবার তোর মরা গাঙে বান ডেকেছে'র মতো জনপ্রিয় কোরাসের গানের বাইরে দেশাত্মবোধক গান যেমন 'ইছামতীর পাড়ে সে যে ছোট্ট সোনার গাঁ" বা 'ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা রূপের সুধায়' গাওয়া হতো। নাচের ক্ষেত্রে 'মোমেরও পুতুল মোমের দেশের মেয়ে', 'পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে', 'শুকনো পাতার নুপুর বাজে', বা 'মন মোর মেঘের সঙ্গী'। যারা আমার মতো গান বা নাচ পারে না তারা একাঙ্কিকাগুলোতে অপ্রধান চরিত্রে অভিনয় করতো। মোটকথা স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বয়স নির্বিশেষে পাড়ার সব বাচ্চা কোন না কোন কিছুতে অংশগ্রহনের সুযোগ পেতো।
বিপুল আনন্দের উৎস ছিল বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। সকালে প্যারেড, তারপর দিনভর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আর বিকালে 'যেমন খুশি তেমন সাজো'। প্যারেড আর খেলার জন্য ছেলে আর মেয়েদেরকে আলাদা তিনটা তিনটা করে ছয়টা দলে ভাগ করা হতো। প্রতিদিন বিকালে সবাই একসাথে প্যারেড প্রাকটিস করা হতো। দুটো স্নেয়ার ড্রাম আর একটা ব্যাস ড্রামের তালে তালে প্রথমে মাঠে এক চক্কর মার্চপাস্ট করে দশ রকমের পিটি প্রাকটিস চলতো বেশ কিছু সময় ধরে। একেক জন তালে আর সময়ে ভুল করে ফেলত আর সাথে সাথে ট্রুপ লিডার চেঁচিয়ে বকাবকি করে উঠতো। পিটি শেষ হলে সবাই যার যার দল মতো দৌড়, মোরগ লড়াই, হাই জাম্প, লং জাম্প, দড়ি লাফানো ইত্যাদি প্রাকটিস করতো। প্রায় এক মাস ধরে বিকালে এই অনুশীলন চলতো। পনেরই ডিসেম্বর মাঠের মাঝখানে একটা উঁচু বাঁশ পুঁতে সেখান থেকে চারদিকে পাটের দড়ির টানা বেঁধে তাতে রঙিন কাগজের ছোট ছোট পতাকা লাগানো হতো। ষোলই ডিসেম্বর সকালে মাঠের একপাশে চৌকি দিয়ে অভিবাদন মঞ্চ বানিয়ে তার সামনে আরেকটা বাঁশে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হতো। পাড়ার একজন বিশিষ্ট জন আমাদের অভিবাদন গ্রহন করতেন। বাকিরা সামিয়ানার নিচে পাতা কাঠ আর টিন দিয়ে বানানো ডেকোরেটরের ফোল্ডিং চেয়ারে বসে আমাদের কর্মকাণ্ড দেখতেন।
আমরা সারা দিন ধরে নানা রকম খেলা খেলতাম সেগুলোর আবার বয়স ও লিঙ্গ ভিত্তিক দল বিভাজন ছিল। যথাঃ
শিশু (পুরুষ): দৌড় (স্প্রিন্ট), বিস্কুট দৌড়, মোরগ লড়াই, বল নিক্ষেপ
বালকঃ দৌড় (স্প্রিন্ট), অঙ্ক দৌড়, মোরগ লড়াই, হাই জাম্প, লং জাম্প
কিশোরঃ দৌড় (স্প্রিন্ট), রিলে দৌড়, হাই জাম্প, লং জাম্প, পোলভল্ট, চাকতি নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ
শিশু (নারী): দৌড় (স্প্রিন্ট), মার্বেল দৌড়, দড়ি লাফানো, বল নিক্ষেপ
বালিকাঃ দৌড় (স্প্রিন্ট), সুঁই-সুতা দৌড়, তিন পায়ে দৌড়, দড়ি লাফানো, লং জাম্প
কিশোরীঃ দৌড় (স্প্রিন্ট), রিলে দৌড়, বস্তা দৌড়, ভারসাম্য দৌড়, হাড়ি ভাঙা, লং জাম্প, চাকতি নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ
এর বাইরে বয়স্ক পুরুষদের জন্য দড়ি টানাটানির ব্যবস্থা থাকতো। দুপুরে খেলা শেষ হয়ে গেলে সবাই বাসায় খেতে যেতেন। বিকেলের দিকে 'যেমন খুশি তেমন সাজো' প্রতিযোগিতার জন্য একেক জন নানা সাজে হাজির হতো। এখানেও কে, কী সাজছে সেটাতেও নারী-পুরুষের বিভাজন ছিল। যথাঃ
পুরুষঃ ভিক্ষুক, ক্যানভাসার, পাগল, জংলী, মুক্তিযোদ্ধা, সাপুড়ে, কৃষক, জেলে, টোকাই, গায়ে কাদা মেখে মূর্তি
নারীঃ পরী, রাণী, পাহাড়ী মেয়ে, গাঁয়ের বধু, মেথরাণী, চা-শ্রমিক, শহীদ মিনার, অপরাজেয় বাংলা, থেমিস, নার্স
পরে একসময় ভিক্ষুক, পাগল এসব সাজা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় সারা দিনের খেলা আর যেমন খুশি সাজো'র পুরস্কার দেয়া হতো। পুরস্কারের ব্যাপারটা একেক বছর একেক রকমের হতো। এক বছর সব প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসাবে বই দেয়া হলো। আরেকবার দেয়া হলো খেলনা আর ক্রীড়া সামগ্রী। আরেকবার সব তৈজসপত্র আর ঘর সাজানোর জিনিস। পুরস্কার হিসাবে কী দেয়া হবে সেটা নির্ভর করতো আয়োজনে কারা আছেন আর পুরস্কার কেনার জন্য কতো টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেসবের ওপর। এত সব আয়োজনের সব টাকাই ছিল স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান আর আয়োজকদের নিজেদের পকেটের। তহবিলের এই অপ্রতুলতা ও অনিশ্চয়তার সাথে সাথে এই প্রকার আয়োজনে যখন ক্ষমতার রাজনীতি ঢুকতে শুরু করলো তখন থেকে এমন আয়োজন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। এই প্রকার খেলা আর সাজগোজের কোন আয়োজনে আমি জীবনেও কোন পুরস্কার পাইনি, কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কখনো কোন আফসোস ছিল না, বরং এসব আয়োজন যে বন্ধ হয়ে গেছে সেটা নিয়ে পরের প্রজন্মগুলোর জন্য আমার এক প্রকারের হাহাকার আছে।
শীত থাকতে থাকতে স্কুলে অথবা পাড়ায় বনভোজনের আয়োজন করা হতো। বাসের সামনের ব্যানারে 'বনভোজন' কথাটা লেখা থাকলেও আমরা চলতি কথায় 'পিকনিক' শব্দটাই ব্যবহার করতাম। আমি কখনো স্কুলের পিকনিকে যাইনি। যারা সেসব পিকনিকে গিয়েছিল তাদের কাছ থেকে পিকনিকের বর্ণনা শুনে সেগুলোকে ক্লাসের পড়াশোনার বর্ধিত রূপ বলে মনে হয়েছিল। স্কুলে অবশ্য এটাকে প্রায়ই 'বার্ষিক বনভোজন' না বলে 'বার্ষিক শিক্ষাসফর' বলা হতো। তবে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় একবার সত্যি সত্যি শিক্ষাসফরে গিয়েছিলাম। সেবার ক্লাসের বিজ্ঞান বিভাগের ছেলেদের নিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষকেরা মিরপুরের চিড়িয়াখানা আর বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিলেন। আমরা সারা দিন ধরে এক একটা পশু-পাখি দেখেছি আর খাতায় তাদের বৈজ্ঞানিক নাম, বৈশিষ্ট্য, খাদ্য, বাসস্থান এসব নিয়ে লিখেছি। এক একটা উদ্ভিদ দেখেছি আর খাতায় তার বৈজ্ঞানিক নাম, কাণ্ড-মূল-পাতা-ফল-ফুলের বৈশিষ্ট্য লিখেছি, পাতা সংগ্রহ করে স্কচ টেপ দিয়ে খাতায় আটকেছি। সেদিন দুপুরে খাবার জন্য আমরা একটা বড় ডেগচি ভর্তি করে তেহারী রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলাম। বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে আমরা গোল হয়ে বসে ব্যাগ থেকে যার যার প্লেট-গ্লাস বের করে তেহারী খেয়েছিলাম। আমাদের কাছেই একজন লোক একটা বড় বালতিতে বরফ-জলে কোকাকোলার কাচের বোতল ডুবিয়ে রেখে বিক্রি করছিলেন। ঐ দিনের আগে আমি কখনো ঝাঁজের চোটে কোকাকোলা খেতে পারিনি। অথচ সেদিন বাসা থেকে যা টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম তার সব দিয়ে কোকাকোলা কিনে খেয়েছিলাম। সেদিন বিকালে আমাদের শিক্ষকদের বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে প্রেমপিয়াসী যুগলদের কর্মকাণ্ড আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখতে। কিন্তু চালুনী দিয়ে কি বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানো যায়!
স্কুলের পিকনিকে না গেলেও পাড়ার বা কোচিং সেন্টারের পিকনিকগুলোতে অনেকবার গেছি। সেগুলোতে নির্ভেজাল মজা করা গেছে। সেটা বাসে গান গাইতে গাইতে যাওয়াতে হোক, জঙ্গলে ছোটাছুটিতে হোক, সবাই মিলে ছবি তোলাতে হোক, আর লুকিয়ে সিগারেটে দুই/এক টান দেয়াতে হোক! আমরা মূলত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, চন্দ্রা, সালনা, রাজেন্দ্রপুর, মধুপুরের গড়, সোনারগাঁ অথবা কোটবাড়ির শালবন বিহারে পিকনিকে যেতাম। পরে এর সাথে শফিপুর আনসার একাডেমি যোগ হয়। ফিরে আসার পথে সাভার স্মৃতিসৌধ পড়লে সেখানেও যাওয়া হতো। পিকনিক নিয়ে উত্তেজনার শুরু হতো আগের দিন রাতে যখন কারো বাসায় মুরগী কাটা, আলু-পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানো, মশলা বাটা, গরু/খাসির মাংস সেদ্ধ করা, মুরগীর মাথা-গলা-গিলা-কলিজা-ডানা দিয়ে লটপটি রান্না এসব করা হতো। তখন সে বাসায় পিকনিক পার্টির অনেকে জড়ো হয়ে ক্যাসেট প্লেয়ারে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে, লাইট অফ করে দিয়ে উদ্দাম নাচানাচি হতো। আরেক ঘরে একদল জড়ো হয়ে কল ব্রিজ বা টোয়েন্টি নাইন খেলত। উত্তেজনার পরিমাণ বেশি হওয়ায় দেখা যেতো রাত একটা বাজতে না বাজতে এক এক করে ঘুমে ঢলে পড়তো বা যার যার বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে যেত। সকালে আগের রাতে রান্না করা লটপটি দিয়ে পরোটা দিয়ে নাস্তা করা হতো। কখনো আবার পোলাওয়ের চাল, মুগ ডাল আর লটপটি দিয়ে একটা খিচুড়িমতো জিনিস বানানো হতো সকালের নাস্তার জন্য। কখনো পরোটা-ভাজি বা পরোটা-সুজির হালুয়াও নাস্তায় খাওয়া হতো। নাস্তা শেষে বাসের ছাদে ডেগচি, লাকড়ি, অন্যান্য খাবার-দাবার, ভেতরে প্লেট-গ্লাস-চামচ-মাইক এসব তুলে, সামনে নাইলন কাপড়ে লেখা ব্যানার টাঙিয়ে গন্তব্যস্থলে ছোটা হতো। গাড়ির সামনের দিকে এঞ্জিন থাকতো বলে ব্যানারটার জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফুটো করে দেয়া হতো। আয়োজকরা সাথে হারমোনিয়াম-তবলা-গিটার নিতেন। কেউ কেউ ফুটবল, ক্রিকেট সেট বা ফ্রিসবি নিয়ে যেতেন। দলের মধ্যে যারা গান গাইতে পারতেন তাদেরকে বেশ সাধ্য সাধনা করলে তারা কিছু চটুল গান গাইতেন। কেউ কেউ হাতে মাইক পেয়ে নানা রকমের কৌতুক শোনাতেন। আমি সাধারণত পাহাড় (আসলে টিলা), জঙ্গলে ঘোরার দলগুলোর কোনটার সাথে জুটে যেতাম। দুপুর বেলার খাবারে ভালো আয়োজন হলে পোলাও, মুরগীর রোস্ট, গরু/খাসীর রেজালা, সালাদ আর কোমল পানীয় থাকতো। আয়োজন খারাপ হলে পোলাও, গরু/খাসীর রেজালা আর লেবু থাকতো। বিকালের নাস্তায় কমলা/আপেল/কলা, এক টুকরো কেক, একটা শুকনো মিষ্টি (সাধারণত মনসুর বা লাড্ডু) থাকতো। এখনকার বিবেচনায় তখনকার পিকনিকগুলোর আয়োজন অতি দরিদ্র ছিল। এমন আনুষ্ঠানিক বনভোজনের বাইরে ঘরোয়া বনভোজনও বেশ হতো। আশেপাশের কয়েক বাসার বাচ্চারা মিলে কারো বাসার উঠানে একদিন খিচুড়ি সাথে ডিম বা মাংস রান্না করে খেতো। আমার ছোট ভাই-বোন, জ্ঞাতি ভাই-বোন, ভাগ্নেদেরকে মাসে দুই বার করে এমন বনভোজন করতে দেখতাম।
যেকালে যাত্রীবাহী জাহাজে করে দূর দেশে যেতে হতো সেকালে জাহাজে ভ্রমণকালীন সময়ে যাত্রীদের মধ্যে একপ্রকার সংক্ষিপ্ত রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠত। ভ্রমণ শেষে বন্দরে নামামাত্র ঐ সম্পর্কের ইতি ঘটতো। একে বলা হতো 'Shipboard romance'। এদেশে শীপবোর্ড রোমান্সের আদলে এককালে 'পিকনিক রোমান্স' প্রচলিত ছিল - সেটার ব্যাখ্যা বাহুল্যমাত্র। কৈশোরে এক পিকনিকে যাবার পর এক বালিকাকে দেখে আমার পিকনিক রোমান্সের ইচ্ছে জাগে, কিন্তু বালিকা কেবল নানা অজুহাতে মাগুর মাছের মতো পিছলায়। আমি তো আর পাকা খেলোয়াড় না, তাই বিফল মনোরথ হয়ে বাবুর্চিদের রান্নাবান্না দেখি, গাছের নিচে ঘুমানোর চেষ্টা করি। শেষ বিকেলে যখন বাড়ি ফেরার পালা আসলো তখন আমাদের দলনেতা সবাইকে গোনাগুনতি করে বাসে তুলতে লাগলেন। দেখা গেল ঐ বালিকা ও আমাদের এক 'বড় ভাই' নিখোঁজ। তাদের জন্য মাইকিং পর্যন্ত করা হলো। শেষে তাদেরকে অতি নিকটের এক ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে দেখা গেল। ঐদিন আমার খুব অভিমান হয়েছিল। আমার সাথে পিকনিক রোমান্সে তার কী ক্ষতি ছিল? আমি মোটা বুদ্ধির মানুষ বলে যে কথাটা বুঝতে অনেক বছর লেগে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে - বালিকাটি আমাকে পছন্দ করতো না।
প্রথম প্রথম আমাদের পিকনিকগুলোতে হিন্দী বা বাংলা সিনেমার গান বাজানো হতো। যতদিন পর্যন্ত গান বাজানোর দায়িত্ব মাইক কোম্পানিগুলোর হাতে ছিল ততদিন এটা চলেছে। 'গোল্ডেন মাইক হাউজ' বা 'খাজা রেডিও হাউজ' থেকে যখন মাইক সেট ভাড়া আনা হতো তখন সাথে ৩৩ বা ৪৫ আরপিএম-এর লং প্লে ডিস্ক প্লেয়ারও আনা হতো। সেখানে যে ভিনাইল ডিস্কগুলো বাজানো হতো তার সবই হিন্দী বা বাংলা সিনেমার গানের, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিক্রমপুরের ভাষায় করা কৌতুক। যখন থেকে মাইক সেটে ক্যাসেট প্লেয়ার বাজানো সম্ভব হলো তখন থেকে আমরা আর আগের গানগুলো বাজাতে চাইতাম না। বাজারে তখন একটা দুইটা করে ক্যাসেটে বের করা অ্যালবাম আসছে – এম এ শোয়েব, কুমার বিশ্বজিৎ, সোলস্। ১৯৮১ সালে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের এক পিকনিকে গিয়ে দেখি কেবল আমরা না আশেপাশের সব পিকনিক পার্টি কেবল 'সুপার সোলস্' বাজাচ্ছে। বার বার রিউইন্ড করে 'আচ্ছা পাগল মন রে দিন গেলে তুই' বাজানো হচ্ছে। তার তালে তালে অনেকেই দল বেঁধে নাচছে। আমি এর আগে এদের গান কখনো শুনিনি। ক্যাসেটের কাভারে দুই সারিতে বসা ব্যান্ড সদস্যদের ছবি দেখিয়ে একজন বলল, দেখ্ সামনের সারির সবচে' ডানের কালো শার্টপরা, কোঁকড়ানো ঝাকড়া চুলের ছেলেটা খুব ভালো ইংলিশ গান গায়। ঐ অ্যালবামেই যখন 'Vision' আর 'Life inside out' শুনলাম তখন মনে হলো, আরে! বনি এম, অ্যাবা বা মাইকেল জ্যাকসনের বাইরে বাঙালীরাও তো ভালো ইংলিশ গান গাইতে পারে! ঐ প্রথম নাসিম আলী খানের নাম জানা, তাঁর গাওয়া গান শোনা। আরও পরে 'চাইম' ব্যান্ডের গাওয়া 'Come down to the street' গানটাও শুনেছিলাম।
বাংলা ব্যান্ডের নিজেদের ইংলিশ গান করার ইতিহাস খুব দীর্ঘ হতে পারেনি, বিশেষত ব্যাপক প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা পাওয়া ব্যান্ডগুলো একসময় নিজেদের ইংলিশ গান করা একেবারেই ছেড়ে দেয়। তাতে আস্তে আস্তে এদেশী ব্যান্ডের নিজেদের ইংলিশ গানগুলো বিস্মৃতির আড়ালে চলে যেতে থাকে। ঐ পিকনিকের প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে একদিন টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে নাসিম আলী খানকে দেখে খুব বেদনার সাথে লক্ষ করলাম তাঁর মাথায় আগের কোঁকড়ানো ঝাকড়া চুলের কিছু অবশিষ্ট নেই। তিনি যা গান গাইলেন সেখানে নিজেদের কোন ইংলিশ গান নেই। সেই সব গানের ঘ্রাণ আর রঙ 'নাম না জানা, কোন অজানায়' হারিয়ে গেছে।
২০ মার্চ ২০২১