বগুড়ায় ছাগলকাণ্ড: বদলি করা হলো সেই ইউএনওকে
ফুলগাছ খাওয়ায় দুই হাজার টাকা জরিমানা করে আলোচনায় আসা বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিনকে বদলি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বদলির আদেশ সংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক মোবাইলে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফুলগাছ খাওয়ার অভিযোগ গত ১৭ মে ইউএনও একটি ছাগলের ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা করার ৯ দিন পর মালিক সাহারা বেগমকে না জানিয়ে সেটি বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে। এই বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচনায় আসলে গত ২৭ মে জরিমানার টাকা ইউএনও নিজে ফেরত দিয়ে ছাগল সাহারা বেগমের কাছে ফিরিয়ে দেন।
এরপর ইউএনও বলেছিলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই নারীকে ছাগল ফেরত দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা আমি দিয়েছি। তাকে সংশোধনের জন্য জরিমানা করেছিলাম, শাস্তি দেয়ার জন্য নয়।'
সেই নারী ছাগল বিক্রি করে দেয়ার যে অভিযোগ করেছেন, সেটি সত্য নয় বলে দাবি করেন ইউএনও। তিনি বলেন, ছাগলটি একজনের জিম্মায় দেয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়ার পর তার বদলির আদেশ বগুড়ায় এসে পৌঁছেছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, 'ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোনো বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় ঠিক নয়। ওই ইউএনও বদলি হয়েছেন। তাকে স্থানীয় সরকার বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল মঙ্গলবার এসেছে। এটা নিয়মিত বদলি বলা যায়।'
এর আগে গত ১৭ মে উপজেলা পরিষদের বাগানের ফুল খাওয়ার অপরাধে ছাগল আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ইউএনও। তিনি ছাগল মালিকের অনুপস্থিতে এই জরিমানা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়টি 'ভাইরাল' হয়ে যায় গণমাধ্যমের কল্যাণে।
পরে জরিমানার টাকা দিতে না পারায় নয় দিন আটকে রাখার পর মালিক সাহারা বেগমকে না জানিয়ে ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার ছাগল মালিক সাহারা বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলো সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান। গত ১৭ মে তার ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানায়, ছাগলটি ইউএনও'র এক নিরাপত্তা কর্মীর নিকট রয়েছে। তিনি ইউএনও'র বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এসময় সাহারা বেগম ছাগল নিতে চাইলে তাকে ছাগল দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ওই নিরাপত্তাকর্মী।
নিরুপায় হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে তাকে তিনি (নির্বাহী অফিসার) বলেন, ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২২ মে শনিবার ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন।
তিনি আরোও জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসার গৃহকর্মী তাকে জানায়, ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। জরিমানার দুই হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি তিন হাজার টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে ওই গৃহকর্মী।
তবে এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর বলে আসছেন তিনি ছাগল বিক্রি করেননি; জিম্মা রেখেছেন উপজেলা পরিষদের পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে।
সীমা শারমিন জানান, উপজেলা চত্বরে একটি পার্ক করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলের গাছ নিয়ে এসে লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ওই ছাগল এসে গাছের ফুলগুলো খেয়ে নিয়েছে কয়েকবার। এ বিষয়ে ছাগলের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু উনি কথা শোনেন নি। এ কারণে গণ-উপদ্রব আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে এভাবে জরিমানা করা যায় কিনা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইন মতে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ স্বীকার করতে হবে। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান বা সম্পদের (ছাগল) মালিকের বিরুদ্ধে এভাবে জরিমানা করা ঠিক হয়নি। এই ঘটনায় প্রচলিত বৈধ রীতি অনুযায়ী খোয়াড়ে ছাগল রাখতে পারতেন। অথবা বেশি ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে পারেন।