বিশ্ব চায় চীন ল্যাব লিকেজ তদন্তের ফল প্রকাশ করুক
করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, উদ্যোগ নিচ্ছে নতুন করে তদন্তের। এর মাধ্যমে চীনের উহান নগরের ভাইরাস গবেষণাগার থেকেই দুর্ঘটনাবশত ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে কিনা- সেই তত্ত্বটিও তদন্ত করবেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় পশ্চিমারা প্রশ্ন তুলছে, চীন কী কিছু গোপন করেছে বা সঠিক তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে?
উন্নত ও ধনী রাষ্ট্রগুলোর প্রভাবশালী জোট জি-৭ নেতারা চলতি সপ্তাহান্তে ভাইরাসের উৎস সন্ধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে নতুন করে একটি স্বচ্ছ তদন্তের আহবান জানাবেন। এ সংক্রান্ত খসড়া বিবৃতিটি ইতোমধ্যেই ব্লুমবার্গ নিউজের হাতে এসেছে। তবে বিবৃতিতে তারা আসলে কী চান সেবিষয়ে অস্পষ্টতা বজায় রেখেছেন।
ইতঃপূর্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের উৎস তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যেই চীনকে করা উচিৎ এমন কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ের প্রশ্ন তৈরির নির্দেশ দেন।
বেইজিং বরাবরের মতোই গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর তত্ত্বটি অস্বীকার করেছে। হু'র ইতঃপূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্স কোভ-২ সম্ভবত প্রাকৃতিক উৎস থেকেই ছড়ায়, এবং সেই ব্যাখ্যাকে প্রমাণ হিসেবে দাবি করেছেন চীনা কর্মকর্তারা।
তবে হু' মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, 'ল্যাব লিক' সংক্রান্ত তত্ত্বটি প্রমাণে আরও তদন্ত হওয়া দরকার। এবিষয়ে আরও সম্পদ নিয়োজিত করার জন্য তিনি প্রস্তুত বলেও জানান। ২০১৯ সালের অন্তত সেপ্টেম্বর মাসের জৈবিক নমুনা চীন দিলে তাতে হু'র বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান উপকৃত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইউরোপিয় ইউনিয়নও একইভাবে চীনের প্রতি আরও তথ্য প্রদানের অনুরোধ করেছে।
সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন অনুসন্ধান কী নিয়ে হতে পারে, তার একটি ধারণা এখানে তুলে ধরা হলো;
উহান ল্যাবে গবেষণার বিস্তারিত তথ্য:
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে ঠিক কী ধরনের গবেষণা চলছিল, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ২০২০ সালের মার্চে গবেষণাগারটির বাদুড়ের করোনাভাইরাস বিষয়ক শীর্ষ গবেষক শি ঝেংলি সায়েন্টেফিক আমেরিকা ম্যাগাজিনে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, তার ল্যাবে থাকা কোনো নমুনার সঙ্গেই কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের জেনেটিক সংকেতের মিল নেই। উহান ল্যাবের সকলের কর্মীর দেহে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়নি বলেও হু'র অনুসন্ধানী দলকে জানান তিনি।
তবে, হু'র গবেষক দলকে উহান ল্যাবে থাকা করোনাভাইরাসের সকল নমুনা ও জেনেটিক সংকেত দেয়নি চীন। করোনাভাইরাস নিয়ে পরিচালিত গবেষণার প্রাত্যহিক রেকর্ড (লগবুক) ও কী ধরনের গবেষণা চালানো হয়েছিল সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যও তাদের দেওয়া হয়নি।
তাছাড়া, প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসকে রূপান্তরের মাধ্যমে সেটি আরও সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রূপ নেয় কিনা সাধারণত তেমন একটি পরীক্ষার চল রয়েছে। উহান ইনস্টিটিউট তেমন গবেষণায় যুক্ত ছিল কিনা- সেব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি।
ল্যাব কর্মীদের মেডিকেল রেকর্ড:
গত মাসে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম নিজ দেশের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে উহান ল্যাবের তিন কর্মী গুরুতর অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যান্য কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জানাচ্ছে, ইতঃপূর্বে, ২০১২ সালে দক্ষিণপশ্চিম চীনের একটি পরিত্যক্ত খনিতে কাজ করা কিছু শ্রমিক হঠাৎ করে অজ্ঞাত এক শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন, এরপরই উহান ল্যাবের কর্মীরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকেই সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এব্যাপারে উহান ল্যাবের বাদুড়ের করোনাভাইরাস গবেষক শি ঝেংলির সুরেই গত সপ্তাহে চীনা দৈনিক চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত এক খবরে দাবি করা হয়, উহান ল্যাবের কর্মীদের কেউ কখনোই কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হননি।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে ল্যাবটির যেসব কর্মী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল হু'র গবেষক দলকে তাদের মেডিকেল রেকর্ড ও নমুনা দেওয়া হয়নি। হু গবেষকরা এখন দক্ষিণপশ্চিম চীনের ওই খনি শ্রমিকদের থেকে সংগৃহীত নমুনাও চাইতে পারেন।
প্রথমদিকের সংক্রমণের ঘটনার আরও তথ্য:
মানবদেহে প্রথম সার্স কোভ-২ ছড়ানোর সময়কাল জানতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহান শহরের রোগীদের স্বাস্থ্য রেকর্ড, মৃত্যুহার ও সর্দি-কাশির ওষুধ বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা পর্যালোচনা করে হু'র গবেষক দল জানিয়েছে, উহান শহরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার অন্তত দুই মাস আগেই অনেক রোগীর মধ্যেই ইনফ্লয়েঞ্জার মতো রোগ এবং শ্বাসযন্ত্রে ব্যাপক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল।
আন্তর্জাতিক তদন্ত দলটি স্থানীয় ২০০টি মেডিকেল সেন্টারের ৭৬ হাজার কেস রেকর্ড পরীক্ষা করে। চীনা গবেষকরাও হাসপাতালগুলোয় সংরক্ষিত ওই সময়ের সাড়ে চার হাজার রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেছেন।
এরপরও চলতি বছরের শুরুতে চীনে যাওয়া হু'র দলটি বলেছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের দেখা দেওয়া শ্বাসযন্ত্রের রোগটি সম্পর্কে আরও বিশ্লেষণ করতে হবে।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ