করোনা আক্রান্ত মরদেহ সৎকারে পাশে এলো না কেউ, সমাধি দিল তিন স্বেচ্ছাসেবী
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিধান চন্দ্র মন্ডল। মারা যাওয়ার পর মৃতের পাশে যাননি স্বজনদের কেউ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মরদেহের পাশে কাঁদছিলেন স্ত্রী। এভাবে বাড়ির বারান্দায় মরদেহটি পড়ে থাকে টানা ১৫ ঘণ্টা।
অবশেষে মৃতের সৎকারের জন্য এগিয়ে আসে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিম। শুক্রবার (১১ জুন) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার সমাধির কাজ সম্পন্ন হয়।
বিধান চন্দ্র মন্ডল (৩৭) শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের মৃত.কালিপদ মন্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাতে কোভিডজনিত কারণে মারা যান তিনি।
শুক্রবার সকালে মরদেহটি সৎকারের জন্য হিন্দু যুব পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক মনো দ্বীপ মন্ডল সহযোগিতা চান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারী। এরপর এ কর্মকর্তা শরনাপন্ন হন উপকূলীয় অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবক টিম সিডিও ইয়ুথ টিমের।
সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্য ইয়ুথ টিমের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, সদর ইউনিটের সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন, সদস্য জামাল বাদশা তিনজন মিলে সমাহিত করেন বিধান চন্দ্র মন্ডলের মরদেহ।
বিধান চন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী শৈবা রানী মন্ডল জানান, করোনায় তার স্বামী মারা গেলে সৎকারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। চার ও দুই বছর বয়সী শিশু সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।
"আমাদের দেখার মত আর কেউ রইলো না।" বলছিলেন তিনি।
সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গাজী আল ইমরান বলেন, "বিধানের স্বজনরা তাকে ফেলে রেখে গেলেও সিডিওর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যে ধর্মের মানুষ হোক না কেন তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। যে কোন দূর্যোগ দুর্দিনে আমরা মানুষের পাশে রয়েছি।"
সিডিও ইয়ুথ টিমের সভাপতি ওসমান গণি জানান, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সৎকার করার কথা ছিল। তবে সৎকার করতে গেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য যেসব ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করতে হয় সেগুলো করা সম্ভব হয়নি। সেকারণে মরদরহটি মাটি খুড়ে সমাধি দেওয়া হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল্লাহ্ বলেন, শ্যামনগর উপজেলা হিন্দু পরিষদের কেউ এগিয়ে আসেনি মরদেহটি সৎকারের জন্য। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা স্বেচ্ছাসেবীরা সমাধির ব্যবস্থা করেছেন। করোনাকালে তারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করে আসছেন।
তিনি বলেন, "ওই পরিবারেরঘরে খাবার নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবেন।"