উন্নয়ন কর্মসূচীতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা কমানো হবে 'বিপর্যয়কর'
বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে ১০ বছর ধরে চলা ৪৫ কোটি পাউন্ডের সফল অংশীদারিত্বের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল সহায়তা হ্রাসের সিদ্ধান্তকে বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।
সোমবার 'দ্য গার্ডিয়ানে' প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে তিনি 'পেটে ঘুষি' মারার সাথে তুলনা করেন।
আসিফ বলেন, সহায়তা সংকোচনের ফলে হাজারো মেয়ে শিশু শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে, লাখো নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ সুবিধা পাবে না। এছাড়া, সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে চরম দরিদ্র হাজারো মানুষ।
ব্রিটিশ সহায়তায় ব্র্যাক বাংলাদেশে বৃহত্তম অনানুষ্ঠানিক স্কুল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে পাঠদান সম্পূর্ণ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। ব্র্যাক বাংলাদেশ ছাড়াও ইথিওপিয়া, ঘানা, ভারত, পাকিস্তান, হন্ডুরাস এবং পেরুতে বিশ লাখ পরিবারকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেছে।
২০১১ সাল থেকে চলতে থাকা ব্র্যাকের কৌশলগত অংশীদারি ব্যবস্থাপনা (এসপিএ) থেকে যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন কমন ওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এফসিডিও) সহায়তা সংকোচনের সিদ্ধান্ত নাটকীয়।
যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, "হুট করে তহবিল হ্রাসের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। এটা অনেকটা পেটে জোরে ঘুষি মারার মতো। দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ সরে আসার বিষয়টি আমরা অনুমান করিনি। পাঁচ বছর ধরে ২০ কোটি পাউন্ড সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার থেকে একেবারেই কিছুই না- এটা এক ধরনের ভুল হচ্ছে।"
এসপিএ বাংলাদেশে ১১ কোটি মানুষকে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে আছে ব্র্যাকের স্কুল শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত চার লাখ শিশু। এসব স্কুলে, মেয়ে ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সক্রিয়ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।
"এমন অনেক প্রকল্প আছে যা ৯০ দিনের নোটিশে বন্ধ করতে হয়েছে," বলেন সালেহ। এছাড়া, অন্যান্য দেশেও ব্র্যাকের প্রকল্প সংকোচিত করার কথা জানান তিনি।
"আমরা এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছি। কোভিডের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য কর্মসূচী অব্যাহত আছে। অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচী, শিক্ষা কর্মসূচী সংকোচিত করা হয়েছে। আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যখন আমি স্কুল চালু করতে পারছি না, যখন আমাকে বাল্যবিবাহ রোধের প্রকল্পগুলো বন্ধ করতে হচ্ছে, তখন এই মানুষদের জন্য বিষয়টি এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হবে।"
আসিফ জানান অংশীদারিত্বের তৃতীয় ধাপে এসে বাংলাদেশে এফসিডিও কর্মকর্তারা এই বিতর্কের সূত্রপাত করেন। গত মাসে, তাকে জানানো হয় যে, ২০২১-২২ বছরের জন্য কোনো সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে না।
সালেহ জানান, তহবিল সংকোচনের বিষয়টি আশঙ্কা করলেও তিনি সরকারের প্রাধান্য দেওয়া মেয়ে শিশুদের শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু সংকট নিয়ে ব্র্যাকের সংশ্লিষ্টতার জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেছিলেন।
শুক্রবার, জি-৭ সম্মেলনে আগামী পাঁচ বছর যুক্তরাজ্য বিশ্বের ৯০টি দেশে মেয়েদের শিক্ষায় অতিরিক্ত ৪৩ কোটি পাউন্ড অর্থ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আসিফ।
বিশ্বব্যাপী বিতর্কের সম্মুখীন হয় যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্ত। শিশুদের নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক দাতব্য সংগঠন 'দেয়ারওয়ার্ল্ড'-এর চেয়ারম্যান সারাহ ব্রাউন বিষয়টিকে যুক্তরাজ্যের 'ভণ্ডামি' হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশ্বে চলমান শিক্ষা সংকটের সামনে তহবিলের এই পরিমাণ নিতান্ত তুচ্ছ বলে সমালোচনা করেন তিনি।
এর আগে, তহবিল হ্রাসের বিষয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কমিটির তদন্তে ব্র্যাকের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে, সহায়তা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে দৈনিক এক ডলার নিচে জীবনধারণকারী বাংলাদেশের হাজারো মানুষের জন্য 'বিপর্যয়' বলে উল্লেখ করা হয়।
মহামারি শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পতিত হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ চরম দারিদ্র্যের সম্মুখীন হবে বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটি মানুষ।
দ্য গার্ডিয়ান এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ফরেন কমন ওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের বিবৃতি জানতে চাইলেও তারা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।