উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের ১৬শ’ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা
উচ্চশিক্ষা খাতের উন্নতি ও কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সামর্থ্য বাড়াতে বাংলাদেশের জন্যে ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদ 'হায়ার এডুকেশন অ্যাক্সিলারেশন ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট' নামক প্রকল্পের আওতায় এই অনুমোদন দেয়।
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে এই ঋণ দেওয়া হবে, ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণের মেয়াদ ৩০ বছর।
বিশ্বব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আঞ্চলিক প্রকল্পটি উচ্চশিক্ষায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এরমধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের সমজাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ, ক্রেডিট ট্রান্সফার স্কিম বা এক দেশ থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অংশীদারির ব্যবস্থা।
এর মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক নারীদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা হবে, ফলশ্রুতিতে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণও বাড়বে।
কোভিড-১৯ মহামারি দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চশিক্ষা খাতকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ছে এবং অনেকে ভর্তি হতে পারছে না।
মহামারির কারণে বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে বেশি। ফলে উচ্চশিক্ষা খাতে লিঙ্গবৈষম্য বাড়ছে।
প্রকল্পটিতে ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দিয়ে উচ্চশিক্ষা খাতে অতিমারির কারণে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং টেকসই থাকার পদ্ধতিগত সামর্থ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের জন্য 'ভার্চুয়াল গতিশীলতা' তৈরিতে 'দক্ষিণ এশিয়া উচ্চশিক্ষা পোর্টাল' চালু করা হবে, যার মাধ্যমে নিবন্ধিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজ দেশের বাইরে অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও পোর্টালে সংযুক্ত হতে পারবেন।
প্রকল্পটি জাতীয় গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং শিক্ষার্থীদের যুক্ত হতে এবং সংযোগের জন্য সম্প্রসারিত সুবিধা দেবে।
প্রকল্পটি বাংলাদেশের জাতীয় গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) উন্নয়ন করবে এবং এই নেটওয়ার্কে যুক্ত শিক্ষার্থীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তুকি মূল্যে সংযোগ প্যাকেজ দেবে।
শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হারে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আরও বেশি সংখ্যক নারীদের গুণগত মানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে, তুলনামূলক ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এবং তাদেরকে নেতৃত্বে আনতে প্রকল্পটি নারী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, যা প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের 'এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন' সমন্বয় করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, "আমাদের সামগ্রিক ভবিষ্যতের জন্য উচ্চশিক্ষা অপরিহার্য, এটি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নয়। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি দক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগী সক্ষম শ্রমশক্তি তৈরিতে যুব জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এই অর্থায়ন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার মান ও প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে ও বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ অতিমারির সময় শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা নিশ্চিত করবে।"
প্রকল্পটির বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার মোখলেসুর রহমান বলেন, "প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ায় মানসম্মত শিক্ষার জন্য বর্ধিত চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উপকৃত হবে এবং এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন সক্ষমতা বাড়াবে।"