পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছে এনজিওগুলো
মহামারি চলাকালে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উভয় উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ কমে যাওয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) অর্থ সংগ্রহের উপযুক্ত উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে বেছে নিয়েছে।
কর অব্যাহতির সুযোগ থাকায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী পরিচালনায় মূলধন সংগ্রহে এনজিওগুলো জিরো-কুপন বন্ড কেনার দিকে ঝুঁকছে।
জিরো-কুপন বন্ড থেকে কোনো সুদ পাওয়া যায় না। বিনিয়োগকারীরা অভিহিত মূল্যের থেকে একটি নির্দিষ্ট ছাড়ে এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। মেয়াদকাল শেষ হলে জিরো-কুপন বন্ড থেকে বিনিয়োগকারীরা অভিহিত মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। কুপন বিয়ারিং বন্ডগুলো সময় অনুযায়ী সুদ প্রদান করে থাকে।
বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত বিনিয়োগকারীদের জিরো-কুপন বন্ডের আয়ে্র ওপর কর প্রদান করতে হয় না। অন্যদিকে, ব্যাংক আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদের ওপর সকলকেই কর প্রদান করতে হয়।
কর অবকাশ সুবিধা থাকায় জিরো-কুপন বন্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এনজিওগুলো সাধারণত দুই ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এগুলো হলো- গ্রাহকদের আমানত এবং ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ।
কিন্তু, মহামারির মধ্যে এনজিও গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) এনজিওগুলোকে মহামারির সময় ঋণ সংগ্রহ অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করেছে। তা সত্ত্বেও, এনজিওগুলো তাদের গ্রাহকদের সম্ভব হলে কিস্তি আকারে ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ব্যয় কমানো ও দীর্ঘ মেয়াদে তহবিল সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজারে ঝুঁকছে।
সরকারের শুরু করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এনজিওগুলোকে ঋণ সরবরাহ করে থাকে। তবে, বর্তমান চাহিদা পূরণে তা যথেষ্ট নয়।
গ্রামাঞ্চল ও শহরে ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাক ইতোমধ্যে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন পেয়েছে।
পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাজেদা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ১০০ কোটি টাকা মূল্যের গ্রিন বন্ড ইস্যু করতে নিয়ন্ত্রকের সম্মতি লাভ করেছে।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) এবং বুরো বাংলাদেশও সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জিরো-কুপন বন্ড ইস্যু করার আবেদন করেছে।
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। সংগৃহীত এই অর্থ প্রতিষ্ঠানটি নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ করবে। ২০১৯ সালে সংস্থাটির মোট আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৮৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত বুরো বাংলাদেশ ১৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে চায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাদের মোট আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এছাড়া, আরও বেশ কিছু এনজিও বন্ডের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণে বিনিয়োগে আগ্রহী।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, "ক্ষুদ্রঋণ খাতের বিস্তারে আমাদের আরও তহবিলের প্রয়োজন। অন্যান্য বিকল্পের তুলনায় বর্তমানে পুঁজিবাজার এনজিওগুলোর উপযুক্ত উৎস।"
"এর ফলে, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের জন্য নতুন সুযোগ উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেতেও সাহায্য করবে," বলেন তিনি।
দেশের অর্থনীতিকে দৃঢ় করতে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান সিকিউরিটিজ রেগুলেটরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে কিছু এনজিও সম্প্রতি বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। পুঁজিবাজারের জন্য বিষয়টি ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"এনজিওগুলোকে আমরা পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি যাতে করে তারা সহজেই তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। মহামারির সময় অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ সহজ হবে না," বলেন তিনি।