‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং’ পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং (হাল্কা প্রকৌশল) পণ্যকে ২০২০ সালের ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি নীতি অনুযায়ী পণ্যভিত্তিক রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমরা ২০২০ সালের জন্য লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যকে জাতীয়ভাবে বর্ষপণ্য ঘোষণা করছি। এখাতে আমরা আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প খাতের বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এর রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখারও জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ খাতের পণ্যসমূহের মধ্যে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোমোবাইল, অটো-পার্টস, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারী, সোলার ফটোভলটিক মডিউল এবং খেলনা প্রভৃতি রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পণ্যভিত্তিক রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর একটি পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার রীতি অনুযায়ী অতীতে চামড়া এবং পাটকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় এগুলোর বিকাশ ঘটে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এ বছর আমরা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে গুরুত্ব দিচ্ছি যেহেতু এই শিল্পটির বিনিযোগ আকর্ষণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
‘বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে,’ বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বরাবরের মত এবারও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুারো (ইবিপি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন এবং এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা ইয়াসমিন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের বাণিজ্য খাতের অগ্রগতির ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ,সংসদ সদস্যবৃন্দ, সিনিয়র সচিব, সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও রপ্তানিকারকবৃন্দ, মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশী প্রতিনিধিগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে সামনে রেখে দেশের পণ্য প্রদর্শনী এবং পারিবারিক বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দৃষ্টিনন্দন করে এবারের মেলাকে সাজানো হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি স্টল থাকছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়নকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের মেলা প্রাঙ্গনের গেটের ফিতা কেটে মেলা উদ্বোধনের পর এর বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হওয়ায় প্রায় ৪ বিলিয়ন ভোক্তার সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি কূটনীতিক এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাবো যে, উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার সুবিধার্থে বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিন।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের অনলাইনভিত্তিক ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, অন লাইন পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্যোগ গ্রহণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে তার সরকারের নানাবিধ উদ্যোগও তুলে ধরেন তিনি।
মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অংশগ্রহণকারীসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে আরও বেশি পণ্য নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের অনুরোধও জানান।