'জাতীয় নিরাপত্তা'র স্বার্থে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টানছে চীন
টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করছে চীন। সম্প্রতি চাইনিজ মোবাইল অ্যাপলিকেশন স্টোর থেকে দেশের বৃহৎ রাইড-শেয়ারিং এপ ডিডি চুশিং সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার চীনের সাইবার নজরদারি প্রশাসন দ্য সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএসি) অনলাইনভিত্তিক নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বস জিপিন এবং ট্রাক ও পিকআপ পরিবহন সেবাদানকারী অ্যাপ ফুল ট্রাক অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার ঘোষণা দেয়।
তদন্ত চলাকালে নতুন কোনো ব্যবহারকারী এসব অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না।
প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে সিএসি। তবে, তারা বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রদান করেনি।
ডিডি এবং অন্যান্য অ্যাপের বিরুদ্ধে তদন্তের পর দেশের প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালাগুলো দীর্ঘ সময় অব্যবহৃত থাকার পর নতুন করে টেক প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে।
এর আগে, প্রযুক্তি সম্রাট ও বিলিয়নিয়ার জ্যাক মার প্রধান দুই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আলিবাবা ও অ্যান্ট গ্রুপের লাগাম টেনে ধরে চীনের আর্থিক এবং প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ই-কমার্স গ্রুপ মেটুয়ানের বিরুদ্ধের একই ধরনের অবস্থান নেওয়া হয়।
চীনের এই ধরপাকড়ের কারণে সোমবার এশিয়ার বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। ডিডির পিছে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করে আসছে জাপানি প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংকের ভিশন ফান্ড। সোমবার হংকংয়ে সফটব্যাংকের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার পতন হয়।
অন্যদিকে, আলিবাবা ও টেনসেন্টের শেয়ার পতন হয়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
শুক্রবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে নাম লেখানোর মাত্র দুই দিনের মাথায় ডিডির শেয়ার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসে।
নিউইয়র্কে যোগদানের পরই ডিডি ৪.৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পায়। ২০১৪ সালে আলিবাবার পর এই প্রথম কোনো চীনা কোনো প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্কে এত বড় শেয়ার প্রস্তাব পেয়েছে।
তবে, শেয়ার অন্তর্ভূক্তির পর কী হতে চলেছে সে সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধারণা ছিল না বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ডিডি।
"আইপিওর আগে সিএসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিডি অবগত ছিল না," জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
ডিডির মতো গত জুন মাসে নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে নাম লেখায় বস জিপিন এবং ফুল ট্রাক অ্যালায়েন্স। প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে ১.৬ বিলিয়ন ডলার এবং ৯১২ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পায়।
তিনটি প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে চীনের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের পিছেই রয়েছে চীনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট। তবে, এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেনসেন্টের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সিএসির দাবি, তারা ১ জুন প্রণীত নতুন সাইবার স্পেস বিধিমালার অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে স্পর্শকাতর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিচালনাকারীদের তত্ত্বাবধানের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চীনের জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, ডিডির আন্তর্জাতিক অংশীদারদের হাতে রয়েছে উবারসহ অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাপ। সুতরাং, এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর একটি বিষয়।
শুক্রবার ডিডির বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা প্রদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিএসির এই নতুন অভিযান। প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন ব্যবহারকারী ও ড্রাইভারের রেজিস্ট্রেশন বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রবিবার, চীনা প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি সরানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
২০২১ সালে নিউইয়র্কে ৩৪টি চীনা প্রতিষ্ঠান রেকর্ড সংখ্যক ১২.৪ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের পরই শুরু হলো এই নতুন অভিযান।
তবে, দুই-তৃতীয়াংশ চীনা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূল্য আইপিও থেকে নেমে এসেছে।
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পাশ করা নতুন আইন অনুযায়ী, শেয়ারবাজার অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব প্রদর্শনের আইন জারি হয়। চীনে বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাব প্রদর্শন ব্যতীত পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার হুমকিতে পড়ে।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস