রুদ্ধশ্বাস লড়াই জিতে ফাইনালে ইতালি
প্রথমার্ধে গোলের দেখা মিললো না। রোমাঞ্চ ঠাসা দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গেল ১-১ সমতায়। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও এলো না কোনো ফল। এরপর স্নায়ুক্ষয়ী টাইব্রেকার। যেখানে স্পেনকে কাঁদিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে গেল ইতালি।
মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রথম সেমি ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে স্পেনকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে এবারের ইউরোতে উড়তে থাকা ইতালি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ ১-১ সমতায় ছিল। ফেদেরিকো কিয়েসার গোলে ইতালি এগিয়ে যায়। বদলি হিসেবে নামা আলভারো মোরাতার গোলে সমতায় ফেরে স্পেন।
টাইব্রেকারে ইতালির প্রথম শটটি ফিরিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। বাকি ৪টি শটে গোল করে তারা। স্পেনের দানি ওলমো প্রথম শটে গোল করতে ব্যর্থ হন, অনেক উপর দিয়ে মারেন তিনি। এরপর গোল করেন জেরার্দ মরেনো ও থিয়াগো আলকান্তারা। আলভারো মোরাতার নেওয়া চতুর্থ শটটি ফিরিয়ে দেন ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা।
ইতালি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেও পুরো ম্যাচে আধিপত্য ছিল স্পেনের। ৭১ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে তারা। গোলমুখে ১৬টি শট নেয় তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেন, এর মধ্যে ৫টি ছিল লক্ষ্যে। মাত্র ২৯ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা ইতালির নেওয়া ৭টি শটের ৪টি ছিল লক্ষ্যে।
স্পেনের বিপক্ষে এই জয়ে মধুর প্রতিশোধই নেওয়া হলো ইতালির। ২০১২ ইউরোর ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে হেরেই শিরোপা খোয়াতে হয়েছিল তাদের। সেই দুঃস্বপ্নের পর প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে উঠলো ইতালি।
৮ বছর পর ফাইনালে ওঠা ইতালি ইউরোতে একবারই শিরোপা জিতেছে, সেটাও তাদের প্রথম অংশগ্রহণের আসরে, ১৯৬৮ সালে। এরপর দুটি ফাইনালে খেললেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
ম্যাচ শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ হতে থাকে। তৃতীয় মিনিটে আক্রমণ সাজায় ইতালি। সতীর্থের পাস থেকে বল পেয়ে এগিয়ে যান নিকোলা বারেল্লা। উনাই সিমোনকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ এক শট নেন ইতালিয়ান এই মিড ফিল্ডার। তার শট গোল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অবশ্য জালে জড়ালেও লাভ হতো না। অফ সাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
ত্রয়োদশ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে যায় স্পেন। এই আক্রমণে গোল পাওয়া উচিত ছিল তাদের। কিন্তু পেদ্রির রক্ষণচেড়া পাস পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি মিকেল ওয়ারজাবাল। তার সামনে ছিল শুধু গোলরক্ষক। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শটই নিতে পারেননি স্পেনের এই উইঙ্গার। এরআগেই বল বেদখল হয়ে যায়। ১৫তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফেরান তোরেসের নেওয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
২১তম মিনিটে সহজ সুযোগ মিস করে ইতালি। বাম পাশ দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে যান ভেরাত্তি। তার বাড়ানো বল আরেকজনের পা ঘুরে পৌঁছায় বারেল্লার কাছে। শট নিতে পারেননি তিনি। স্পেনের গোলরক্ষক তখনও জায়গায় ফেরেননি, শট নিলেই বল জালে জড়াতে পারতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে বল হারান বারেল্লা।
২৫তম মিনিটে স্পেনের আক্রমণ। ইতালির ডি-বক্সে বল নিয়ে জটলা তৈরি হয়, সেখান থেকে বল পান দানি ওলমো। বা পায়ে শটও নেন স্প্যানিশ এই উইঙ্গার। কিন্তু ঝাঁপিয়ে ফেরান ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা। ৩৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ওলমোর নেওয়া শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে দারুণ আক্রমণ সাজিয়েও হতাশ করে ইতালি।
৪৮তম মিনিটে দারুণ এক ক্রস বাড়ান ওলমো। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ছুটে যাওয়া ফেরান তোরেস শট নেওয়ার আগেই কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন ইতালির রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জিওভান্নি দি লরেঞ্জো। গোলশূন্যভাবেই প্রথমার্ধ শেষ হয়। ৫২তম মিনিটে স্পেনের আক্রমণ। ওয়ারজাবালের বাড়ানো বলে দারুণ শট নেন সার্জিও বুসকেটস। কিন্তু তার শট একটুর জন্য গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
পরের মিনিটে ইতালির পাল্টা আক্রমণ। সতীর্থের বাড়ানো বল থেকে শট নেন ফেদেরিকো কিয়েসা। কিন্তু ইতালিয়ান উইঙ্গারের দুর্বল শট সহজেই ধরে ফেলেন উনাই সিমোন। ৬০তম মিনিটে আর ভুল হয়নি কিয়েসার। স্পেনের ডি-বক্সে বল পেয়ে অসাধারণ শটে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।
৬৫তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো স্পেন। কিন্তু সহজ সুযোগটি মিস করেন ওয়ারজাবাল। আলতো পায়ে কোকের তুলে দেওয়া চিপে হেড নিতে পারলেই গোলের দেখা মিলতে পারতো। স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। পরের মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে ওলমোর নেওয়া শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৬৭ তম মিনিটে ইতালির দমেনিকো বেরার্দির নেওয়া শট পা দিয়ে ফেরান স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। ৮০তম মিনিটে আরেকটি শট নেন বেরার্দি। এবারও ইতালিয়ান ফরোয়ার্ডের নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন সিমোন। এর কয়েক মুহূর্ত পর ইতালির রক্ষণ গুঁড়িয়ে দেয় স্পেন।
লম্বা করে বাড়ানো বল পান পুরো ম্যাচজুড়ে অসাধারণ খেলা দানি ওলমো। আলতো করে আলভারো মোরাতাকে বল বাড়ান স্প্যানিশ এই উইঙ্গার। ডি-বক্সে ঢুকে ইতালির গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়াতে কোনো সমস্যাই হয়নি তারকা এই স্ট্রাইকারের।
এরপর কোনো দলই আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৮তম মিনিটে ডি-বক্সের একটু দূরে ফ্রি-কিক পায় স্পেন। নিচে করে সরাসরি গোলে শট নেন ওলমো। ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ফেরান দোন্নারুম্মা। ফিরতে বলে শট নেন মোরাতা। কিন্তু রক্ষণ বাধায় কেপদ কেটে যায় ইতালির। ১০২তম মিনিটে আরও একটি বিপদ থেকে বেঁচে যায় ইতালি। অতিরিক্ত সময়েও ফল না আসায় টাইব্রেকারে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ হয়।