মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করল কলকাতা হাইকোর্ট
নন্দীগ্রামে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলার বিচারপতি ছিলেন কৌশিক চন্দ।
কিন্তু তার সাথে বিজেপির যোগসাজশ রয়েছে এই অভিযোগে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু হয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব।
গত ২৫ জুন এই মামলার ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন খোদ মমতা।
অবশেষে সেই মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।
তবে বিচারপতিকে নন্দীগ্রাম মামলা থেকে সরানোর দাবি জানানোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫ লক্ষ টাকার জরিমানা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতকে কলুষিত করার জন্য এই জরিমানা ধার্য করা হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে।
ঐ জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে রাজ্য বার কাউন্সিলে, যা পরবর্তীকালে কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে। এ বার এই মামলা কোন বেঞ্চে যাবে, 'মাস্টার অব রোস্টার' হিসেবে তা ঠিক করবেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল।
মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি চন্দ জানান, তার বিরুদ্ধে মামলাকারীর পক্ষ থেকে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার জন্য তিনি সরছেন না। বরং, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার কারণেই তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেন, ''আমার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তাই মামলাটি ছেড়ে দেওয়া উচিত— এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সাধারণ মানুষের উপর ছাড়া যায় না। এটা বিচারপতি ঠিক করবেন। কারও কোনও রাজনৈতিক পছন্দ থাকতে পারে না, এটা এ দেশে প্রায় অসম্ভব। বিচারপতিরাও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন। তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন। তাছাড়া বিচারপতির নিয়োগ সংক্রান্ত সিক্রেট রিপোর্ট জনসমক্ষে আনাটা কি ঠিক? একজন মুখ্যমন্ত্রী গোপনীয়তা বজায় রাখারও শপথ নেন।''
এদিকে মামলার রায় ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান বলেন, ''একজন মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে জরিমানা করা লজ্জাজনক ঘটনা। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।''
মমতাকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানার বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন টুইটে লেখেন, "আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে সত্যি কথা বলার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হয়। আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করি যেখানে মিথ্যে প্রচারের জন্য কোনও দাম দিতে হয় না। প্রসঙ্গটা ধরা গেল? মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় (মোদি থাকলেই সম্ভব)।"
বিজেপির একটি সভায় দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বিচারপতি কৌশিক চন্দের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন ডেরেক ও'ব্রায়েন। এরপরই বিচারপতির সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে আদালতের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের কাছে আবেদন জানান যাতে বিচারপতি কৌশিক চন্দকে এই মামলা থেকে সরানো হয়। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত নিজেই এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।
- সূত্র- ভারতীয় গণমাধ্যম