অর্থনৈতিক দুর্দশায় কিউবার সরকার বিরোধী বিক্ষোভে হাজারো নাগরিকের ঢল
সমাজতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে গত রোববার থেকে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার কিউবান নাগরিক। ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী আন্দোলন।
রাজধানী হাভানাসহ দেশের অন্যান্য শহর মুখরিত হচ্ছে আন্দোলনকারীদের চিৎকারে, 'স্বৈরাচার নিপাত যাক!'
তবে জবাবে থেমে নেই পুলিশও; আন্দোলনকারীদের মারধর ও গ্রেপ্তারের করার মাধ্যমে দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
দেশটির অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা, তার সঙ্গে নাগরিকদের ব্যক্তি-স্বাধীনতার উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ এবং মহামারি মোকাবিলায় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন কিউবানরা। সম্প্রতি কিউবাতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা আরো দ্রুততর টিকাদান কর্মসূচি দাবি করেছেন।
গত বছর কিউবার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ১১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। মহামারি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কিউবার অর্থনীতির উপর অত্যন্ত বাজে প্রভাব ফেলে।
১৯৫৯ সালে সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে সূচিত আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে নব্য এই বিপ্লব ঠেকাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। টিভিতে তার এমন বক্তব্যের পর হাজার হাজার সরকারি সমর্থকেরাও মাঠে নেমেছেন।
প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেন বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভাড়াটে সংগঠকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে রাস্তায় নেমেছেন আন্দোলনকারীরা। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিবেন বলেও প্রতিজ্ঞা করেন।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিবিদ জুলি চাং টুইট বার্তায় বলেন, ''কিউবার এই 'যুদ্ধংদেহী অবস্থা' নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা কিউবার মানুষের পাশে আছি, যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যায়। আমরা শান্তি চাই এবং আমরা যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই।''
স্বাধীনতা নেই'
হাভানার দক্ষিণপশ্চিমের সান আন্তোনিও দে লস বানোস শহরে একটি মিছিলের মাধ্যমে এই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তবে দ্রুতই এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ প্রচার করেন; সেখানে দেখা যায়, সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল ও স্লোগানের ধ্বনিত মুখরিত হচ্ছে রাজপথ; পরিবর্তন চাইছেন কিউবানরা।
আন্দোলনকারীদের একজন, আলেজান্দ্রো বিবিসিকে বলেন, 'আজকেই সেই চূড়ান্ত দিন, আমরা আর নিতে পারছি না। এখানে খাবার নেই, ওষুধ নেই, স্বাধীনতা নেই। তারা আমাদের বাঁচতে দেয় না। আমরা ক্লান্ত।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কিছু আন্দোলনকারীকে পেটাচ্ছেন ও আটক করছেন।
অন্যান্য কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করছেন এবং বৈদেশিক মুদ্রায় পণ্য বিক্রিকারী সরকারি দোকানপাট লুট করছেন। বহু কিউবানদের কাছে, এসব দোকানই একমাত্র জায়গা যেখান থেকে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন; কিন্তু সেখানে চড়া দাম রাখা হয়।
দেশে কোভিড ভ্যাকসিনের ঘাটতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার কিউবায় রেকর্ড ৭০০০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৪৭ জন। মহামারির পর থেকে কিউবায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে।
আন্দোলনকারীদের অনেককে 'প্যাট্রিয়া ওয়াই ভিদা (পিতৃভূমি ও জীবন)' গান গাইতে দেখা গেছে। এই গানের শিরোনাম দিয়ে ১৯৫০- এর দশকের একটি স্লোগানকে বোঝানো হয়; যখন ফিদেল কাস্ত্রো বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করেছিলেন।
- সূত্র: বিবিসি