পর্বত চূড়ার গাছের ডালে অনলাইন স্কুল, উঁকি দেয় হাতি ও চিতা বাঘ!
শ্রীলঙ্কার এক প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে প্রতিদিন পাড়ি দিতে হয় ঝোপ-ঝাড়ে ঘেরা বুনো এলাকা। সেখানে মাঝে মধ্যেই হাজির হয় চিতা বাঘ ও হাতি!
বহিতিওয়া নামের ওই এলাকায় রয়েছে প্রায় ৪৫ জন স্কুল শিক্ষার্থী। ইন্টারনেট সিগন্যাল পাওয়ার জন্য তাদের ও শিক্ষকদের খুঁজে নিতে হয় এমন পাথুরে পর্বতের চূড়া, যার জন্য প্রতিদিন পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় ৩ কিলোমিটারেরও বেশি দুর্গম পথ।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষক নিমালি অনুরুদ্ধিকা ওই সিগন্যাল ব্যবহার করে তার শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ আপলোড করেন। শিক্ষকদের সেই পাঠগুলো ডাউনলোড করার জন্য ওই গ্রামে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদেরও উঠতে হয় একই পর্বত চূড়ায়।
তাদের সবার অবশ্য মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নেই; তাই চার-পাঁচ শিক্ষার্থী একটি ডিভাইস শেয়ার করে পাঠ নেয়।
তাদের বাবা-মা অধিকাংশই কৃষক। অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার সময় অভিভাবকরাও নিজ নিজ সন্তানের সঙ্গে যান।
এইচ.এম. পাথমিনি কুমারির ছেলে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। পাথমিনি জানালেন, ওই শিশুরা দিনে দুইবার ওই পর্বত চূড়ায় ওঠে। ওদের নিরাপত্তাই বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়।
দ্বীপ রাষ্ট্রটির মধ্য-পূর্ব অংশে ওই গ্রামের অবস্থান। সেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার রয়েছে ঘাটতি। এই শিশুরা সবাই একটি সরকারি স্কুলে পড়ে। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরের সেই স্কুল এখন বন্ধ।
অন্যদিকে লুনুগালা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এক গ্রামের বয়স্কজনরা স্কুল শিশুদের নিরাপত্তা দিয়ে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পর্বত চূড়ার ট্রিহাউসে নিয়ে যান। পর্বতটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। সেখানে গেলে ইন্টারনেটের সিগন্যাল পাওয়া যায়। সেখানে গিয়েই শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক আপলোড ও পাঠ ডাউনলোড করে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ স্কুল বন্ধ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সব শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষা পৌঁছে দিতে তারা সব ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে শিক্ষক সংগঠন সিলন টিচার্স ইউনিয়নের প্রধান, জোসেফ স্টালিন বলেছেন, দেশটির ৪৩ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ডিভাইস কিংবা ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পাচ্ছে না এই সুবিধা।
-
এপি থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ