ফাইজারের টিকার দুই ডোজে সময়ের ব্যবধান বেশি হলে অ্যান্টিবডি অধিক কার্যকর: গবেষণা
ফাইজার-বায়োএনটেক টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেশি হলে শরীরের 'ইমিউন সিস্টেম' সংক্রমণের বিরুদ্ধে আরও বেশি কার্যকরীভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্য টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান তিন সপ্তাহ থেকে আরও বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তাদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে এর যৌক্তিকতা মিলেছে।
বিশেষত, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে দুই ডোজের মাঝে আট সপ্তাহের বিরতি দেয়াকে 'সুইট স্পট' বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
২০২০ সালের শেষ দিকেই যুক্তরাজ্য ডোজ প্রদানের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহ করেছে।
কিন্তু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব বয়সের মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার সাথে সাথে সবাইকে অন্তত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে আট সপ্তাহ পর তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
গবেষণার জন্য ২০২০ সালের শেষ দিকে ও ২০২১ সালের শুরুর দিকে বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে টিকা নিয়েছেন এমন ৫০৩ জন এনএইচএস স্টাফের ইমিউন সাড়াদান প্রক্রিয়ার মধ্যে তুলনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার এক মাস পরে তাদের রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানানো হয় যে, ফাইজারের টিকার ডোজ নেয়ার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবধান, উভয় ক্ষেত্রেই শরীরে শক্তিশালী ইমিউন সাড়াদান তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজের পর দশ সপ্তাহের বিরতিতে যে পরিমাণ নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়; তিন সপ্তাহের বিরতিতে তার চাইতে কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে দেহে।
এছাড়াও আরও জানা যায়, প্রথম ডোজের পর যখন অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে যায়; তখনো টি-সেল নামক আরেকটি ইমিউন কোষের মাত্রা বেশি থাকে।
প্রথম ডোজের পর অধিক সময়ের ব্যবধান নিলে সব মিলিয়ে কম টি-সেলস তৈরি হয়। কিন্তু 'হেল্পার টি-সেল' নামক অন্য একটি নির্দিষ্ট ধরনের কোষ ইমিউন মেমোরিকে সাহায্য করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের পিচ স্টাডি জয়েন্ট চীফ ইনভেস্টিগেটর, অধ্যাপক সুজানা ডুয়ানচি বলেন, "একটির চাইতে দুটি ডোজ অবশ্যই ভালো। কিন্তু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগের বিরতির সময় কমবেশি হয়"।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, তিনি মনে করেন, "আট সপ্তাহ আমার কাছে একটি 'সুইট স্পট' বা সুবিধাজনক সময় বলে মনে হয়। কারণ এই মুহূর্তে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ বাড়ছে এবং মানুষও দ্বিতীয় ডোজ নিতে বেশ আগ্রহী। দুর্ভাগ্যবশত, এই ভাইরাসের শেষ দেখতে পাচ্ছি না আমি। তাই টিকা নেয়ার মাধ্যমেই আপনি এর ভারসাম্য করে নিজেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে পারবেন"।
গবেষণার আরেকজন লেখক, ডা রেবেকা পেইনি বলেন, "আমাদের গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে টিকার ডোজ নেয়ার দুটি সময়সূচিতেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ ভালো ইমিউনিটি তৈরি করবে। এখন আমাদের গবেষণার ফলাফলের চিকিৎসাগত গুরুত্ব বুঝার জন্য ফলোআপ গবেষণা চালিয়ে নিতে হবে।"
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান