এপ্রিল থেকে ঋণের সুদ হার প্রয়োগে কঠোর হবে সরকার
আগামী ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ না করা হলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সরকার হার্ডলাইনে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী। সভায় কাস্টম হাউজগুলোতে স্ক্যানার বসানো, ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের রিফান্ড পাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগের কথা জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমতুল মুনিম। পাশাপাশি রমজানে নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই সতর্ক থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর উদ্দিন, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন ব্যবসায়ী নেতা জানান, ব্যাংকের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা নিয়ে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান ব্যবসায়ীরা।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে শিল্প ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রথম দিকে এটি ফেইজ ওয়াইজ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু মেনুফ্যাকচারিং খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করলে অনেক শিল্প বাদ পড়বে। সে পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সব সুদে ৯ শতাংশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এটি বাস্তবায়নে তাদের কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। তাদের চাওয়া অনুযায়ীই ১ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর কেউ বাস্তবায়ন না করলে সরকার হার্ড লাইনে যাবে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, “ব্যাংক ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ করা নিয়ে সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীরা কি উদ্যোগ নেবেন তা জানতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সঙ্গে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে অর্থাৎ ৯ শতাংশ হবে। এই নীতির বাস্তবায়ন হবে ১ এপ্রিল থেকে। যার ফলে নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক ভেদে উৎপাদনশীল খাতে সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ট্রেডিং খাতে ৯ থেকে ১৬.৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র উদ্যোগ ৯ থেকে ১৬ শতাংশ, গৃহ ঋণের সুদহার ১০ থেকে ১৪ শতাংশ, পারসোনাল ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৮ শতাংশ আর ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ।
সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এফবিসিসিআইকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগে থেকেই সব ব্যবসায়ী সংগঠনকে ডেকে তাদের দাবি-দাওয়া শুনতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এনবিআরের কাছে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত আরেকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমদানি রফতানি সহজতর করা ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে চট্টগ্রামসহ সব বন্দরে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিজিটাল স্ক্রেনার বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী ভ্যাট রিফান্ড পাওয়ার ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।