ত্রিপুরা পল্লীকে বদলে দেওয়ায় ‘জনপ্রশাসন পদক’ হাটহাজারীতে
হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের নিভৃত এক পল্লীর নাম 'মনাই ত্রিপুরা'। সেই ত্রিপুরা পাড়ায় 'আমার জেলা আমার শহর' মডেল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে জেলা পর্যায়ে সাধারণ (প্রাতিষ্ঠানিক) ক্যাটাগরিতে 'জনপ্রশাসন পদক ২০২০' পেয়েছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়। যে উদ্যোগের পেছনের কারিগর ছিলেন হাটহাজারীর উপজেলার সাবেক ও বহুল আলোচিত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ আয়োজন। সেখানে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে জনপ্রশাসন পদক নেন হাটহাজারীর বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ছিলেন মো. রুহুল আমিন। মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় 'আমার জেলা আমার শহর' মডেল উদ্যোগ বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তিনি ইউএনও থাকাকালে। দু'সপ্তাহ আগে তিনি বদলি হয়ে চা বোর্ডের উপ-সচিব পদে যোগ দেন।
যেভাবে বদলে গেলো মনাই ত্রিপুরা পল্লী
হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে বংশানুক্রমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ৫৫ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলো। বিদ্যুৎ তো দূরের কথা, তিন বছর আগ পর্যন্তও জীবন ধারণের জন্য একান্তই প্রয়োজনীয় সুবিধার লেশমাত্রও ছিল না ওই পল্লিতে। যোগাযোগ সমস্যা, সুপেয় পানির অভাব, স্যানিটেশন সমস্যা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অসচেতনতা ও শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা।
২০১৮ সালে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন রুহুল আমিন। এর মাঝেই হাম রোগের প্রাদুর্ভাবে সোনাই ও মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে বেশ কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়। রুহুল আমিন দায়িত্ব নিয়েই সরকারি সুবিধাসমূহ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বরাদ্দে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে শত বছর ধরে সুবিধাবঞ্চিত হাটহাজারী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুর্গম মনাই ত্রিপুরা পল্লী পাল্টে যেতে থাকে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় সৌর বিদ্যুৎ। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেমিপাকা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য মেলে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকার বিশেষ বরাদ্দ। তাছাড়া মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা ১২ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দুর্যোগ সহনীয় ঘর।
পরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে দুই কিলোমিটার রাস্তা, বিদ্যালয়, টিউবওয়েল, শৌচাগার স্থাপন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, খেলার উপকরণ ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান, মন্দির নির্মাণ, মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, পূজায় সরকারি বরাদ্দ এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিদায়ী ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, "হাটাহাজারি ইউএনও জনপ্রশাসন পদক-২০২০ পাওয়ায় আমার চাইতে বেশি খুশি আর কেউ নয়। মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় যা কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তা ইউএনও অফিস বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক হয়েছে, আমি ব্যক্তি রুহুল আমিনের এতে কোনো ভূমিকা নেই। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে, আমি যা করেছি তিনিও তাই করতেন বা আমার চেয়েও ভালো করতেন।"