মাছ শিকারের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের ২ লাখ জেলে
নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা আবুল বাশার মাঝি সাগরে মাছ শিকারে যেতে ১৮ জন সদস্যকে নিয়ে গত ২৪ জুলাই থেকে চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে অপেক্ষা করছেন। সাগরে মাছ শিকার বন্ধে সরকারের ঘোষিত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে যেতে সব ধরনের প্রস্তুতিও ছিল তার।
কিন্তু বৈরী আবহাওয়া, লঘুচাপ, সমুদ্র উত্তাল, টানা বৃষ্টি এবং সমুদ্রে সতর্ক সংকেতের কারণে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাগরে যাত্রা শুরু করতে পারেননি তিনি।
আবুল বাশার মাঝির মতো চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার, কাট্টলি, পতেঙ্গাসহ কর্ণফুলী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড উপজেলার সাগরপাড়ে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজার যান্ত্রিক ট্রলারে ২ লাখ জেলে সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
সাগরে সারা বছর নিয়মিত মাছ শিকারের পাশাপাশি এবার যুক্ত হয়েছে ইলিশের মৌসুম। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও বড় ট্রলারের পাশাপাশি ইলিশ মাছ শিকারে নিয়োজিত জেলেরাও অলস বসে আছে। এই মৌসুম ঘিরে জেলেরা বাড়তি আয়ের আশায় থাকে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিভিন্ন ঘাটে নোঙ্গর করে আছে মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাগুলো।
আবুল বাশার মাঝি বলেন, "এমনিতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর বৈরী আবহাওয়া সেই কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কবে নাগাদ মাছ শিকারে রওনা হবো সেই নিশ্চয়তা নেই"।
এদিকে উত্তাল সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি ট্রলার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকায় ডুবে যাওয়ার সময় গত ২৭ জুলাই রাতে ১১ জেলেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। সাগর উত্তাল থাকায় একই দিন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের কাছে একটি তেলবাহী বাংকার বার্জ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় পাশে থাকা একটি জাহাজ ওই বাংকার বার্জের ৪ নাবিককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।
সোনালি যান্ত্রিক মৎস শিল্প সমবায় সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ছোট বড় মাছ ধরা ট্রলার, ছোট নৌকাসহ প্রায় ৬৭ হাজার মাছ ধরার যান সাগরে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে ফিশারিঘাট সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় ট্রলার মাছ শিকার করে। এতে নিয়োজিত আছে প্রায় ২ লক্ষ জেলে।
সোনালি যান্ত্রিক মৎস শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার টিবিএসকে বলেন, "৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই রাতে প্রায় ১ হাজার ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিল। বৈরী আবহাওয়া এবং ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতের জন্য দুই দিনের মাথায় জেলেরা আবার উপকূলে ফিরে আসে। বেশ কিছু ট্রলার কোন মাছ শিকার করতে পারেনি। আবার কিছু ট্রলার ১৫ থেকে ২০ মণ মাছ শিকার করতে পেরেছে"।
সামুদ্রিক মৎস দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন মৌসুম বিশেষ করে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ছিল এই নিষেধাজ্ঞা।
সামুদ্রিক মৎস দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক ড. মো: শরীফ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "যান্ত্রিক ট্রলারের পাশাপাশি ২২৫টি বড় বাণিজ্যিক ট্রলারও সাগরে যেতে পারেনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১ আগস্ট (আজ) সকাল থেকে যান্ত্রিক ও বাণিজ্যিক মাছ ধরার ট্রলারগুলো সমুদ্রে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারবে বলে আমরা আশা করছি"।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গা টিবিএসকে বলেন, "ভারি বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্র উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোতে টানা কয়েকদিন ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল ছিল। তবে সেটি শুক্রবার দুপুর ২টার পর প্রত্যাহার করা হয়"।
ভোলা জেলার মনপুরার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, "২৩ জন সদস্যকে নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার অপেক্ষা দিন দিন বাড়ছে। প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই এটি যেমন সত্যি, তেমনি করোনা আর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সবমিলিয়ে এই পেশার লোকজন দুর্বিষহ জীবন পার করছে"।