লোকসানের মুখে আদা-রসুন আমদানিকারকেরা
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় দাম কমেছে কাঁচা মসলা পণ্য আদা ও রসুনের। গত এক মাসের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমদানি ও সরবরাহ বাড়তি থাকলেও লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় পণ্য দুটির ক্রমাগত দাম কমেছে বলে মন্তব্য ব্যবসায়ীদের।
খাতুনগঞ্জের কাঁচা মসলা পণ্য আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল কোরবানির ঈদকে ঘিরে কাঁচা মসলা পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বৃদ্ধি করে আমদানিকরা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন ধরে চলমান লকডাউনের কারণে জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে না। ফলে বাড়তি সরবরাহের কারণে ঈদের আগে থেকে পণ্যের দাম দফায় দফায় কমতে থাকে। এরমধ্যে দুই মসলা পণ্য আদা ও রসুনের দাম আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে আমদানিকারকদের বড় লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।
কাঁচা মসলা পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জেএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জিন্নাত আলী বলেন, "সব খরচ যোগ করে চীন থেকে প্রতিকেজি আদা আমদানিতে ১৩০ টাকা ও রসুনে ১২০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু পণ্য দুটির দাম বর্তমানে কেনা দরের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এতে প্রতি কন্টেইনার পণ্যে ১০-১৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বহু ব্যবসায়ী আমদানি পণ্যের বিপরীতে ব্যাংকের পাওনা টাকাই শোধ করতে পারবে না"।
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ৎ ও পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচা মসলা পণ্যের মধ্যে একমাসে সবচেয়ে বেশি কমেছে আদার দাম। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দামে। যা গত একমাস আগে ১৫০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। একমাস আগে বাজারে প্রতিকেজি মিয়ানমারের আদা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার উপরে। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দামে। সেই হিসেবে গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে আদার দাম কমেছে কেজিতে কমপক্ষে ৫০-৭৫ টাকা।
এছাড়া গত এক মাসে কেজিতে কমপক্ষে ৬০-৬৫ টাকা কমেছে রসুনের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকা দামে। যা একমাস আগে ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একমাস আগে বাজারে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা দামে। যা বর্তমানে ৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচা মসলা পণ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, "গেল কোরবানির ঈদকে ঘিরে আমদানিকারকরা কাঁচা মসলা পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেই অনুপাতে পণ্য বিক্রি না হওয়ায় আদা-রসুনের দাম নিম্নমুখী। গত একমাস ধরে পণ্য দুটির দাম দফায় দফায় কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে"।
খাতুনগঞ্জের কাঁচা মসলা পণ্যের (পেয়াজ, রসুন ও আদা) পাইকারি জোন হামিদুল্লাহ মার্কেট। হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, "টানা লকডাউনের কারণে জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে খুবই কম। ঈদের আগেও পণ্যের তেমন বিক্রি ছিল না। এখন ঈদের পরে এসে আরো কমে গেছে। কিন্তু এসব কাঁচা মসলা পণ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। দীর্ঘদিন গোডাউনে রাখলে পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যায়। আবার কোল্ড স্টোরেজে রাখলে চার্জ যোগ হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হওয়া পণ্য এখন কেনা দামেরও অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন আমদানিকারকরা"।