এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিশাল ৫ বিলিয়ন ডলারের সংযোগ পরিকল্পনা
আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে ১৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য পাইপলাইনে রেখেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), যার এক-তৃতীয়াংশ পাবে যোগাযোগ খাত।
কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক এ দাতা সংস্থাটি মাল্টিমোডাল সংযোগ স্থাপনকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যার অংশ হিসেবেই এ দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে বড় অংকের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
এডিবি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) নথি অনুসারে, ২০২২-২৪ মেয়াদে এডিবির অর্থায়নের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সম্প্রসারণ, ঢাকা- কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা উত্তরপশ্চিম করিডর রোড, দক্ষিণ করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক উন্নয়নসহ মোট ১৯টি প্রকল্পকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এরমধ্যে ১৩টি সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল কো-অপারেশন (সাসেক) এ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প।
এডিবি সমর্থিত এ উদ্যোগের অধীনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় সাতটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক করিডর স্থাপনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
সাসেক অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো হলো; ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
অগ্রাধিকার পাবে সড়ক, রেল ও নৌপথ:
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্র্যানজিট, টঙ্গী- আখাউড়া ডুয়েল গেজ, ঢাকা-সিলেট করিডর রোড এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোকেও এডিবি'র প্রকল্প তালিকায় রাখা হয়েছে; যা এদেশে উন্নত সড়ক, রেল ও নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে বৃহত্তম উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রতিষ্ঠায় ম্যানিলা ভিত্তিক দাতা গোষ্ঠীটির সংকল্পকে তুলে ধরছে।
বেশ কিছু প্রকল্প ইতোমধ্যেই বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যোগাযোগ খাত নিয়ে এডিবির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, মাল্টিমোডাল পরিবহন নেটওয়ার্ক উন্নয়নে (সড়ক, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ) কাজ করবে এডিবি। আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য থেকে সাসেক করিডর সংক্রান্ত প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
"আঞ্চলিক সংযোগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচল বৃদ্ধির লক্ষ্য থেকে সড়ক খাতে এডিবি জাতীয় মহাসড়ক সম্প্রসারণকে সমর্থন দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেসরকারি বিনিয়োগ ও সার্বিক প্রবৃদ্ধি বেগবান হবে।"
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগের রেল উপখাতে করিডর ভিত্তিক কৌশল নিয়ে একটি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন ও গেজ স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন করা হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক সক্ষমতা ও নৌ যোগাযোগ বাড়াতে বন্দর অবকাঠামোর সম্প্রসারণকেও বিবেচনায় রাখছে এডিবি।
মহামারির অভিঘাত প্রশমনে ভূমিকা রাখবে ঋণ সহায়তা:
কোভিড পরিস্থিতি এবং বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশে তাদের ঋণ কার্যক্রম ঢেলে সাজিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যার আওতায় সড়ক, রেল ও নৌপথ প্রকল্পের জন্য পাঁচশ কোটি ডলারের ঋণ পাইপলাইনে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাসেক- এর অধীন ঢাকা- উত্তরপশ্চিম করিডর রোডের (ফেজ-২) প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-হাতিকমরুল-রংপুর সড়ককে চার লেনে উন্নয়নের কাজ ২০২৪ সালের শেষ হওয়ার কথা।
এ প্রকল্পে বিভিন্ন ধাপে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরমধ্যেই ছাড় করা হয়েছে ৭০ কোটি ডলার। আগামী বছরে এ প্রকল্পের এডিবি ঋণের তৃতীয় পর্যায়ে ৩০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। আর ঋণের বাকি অংশ ২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে ২০২৪ সালে ।
তবে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালেই সাসেক ঢাকা-নর্থওয়েস্ট করিডর (ফেজ-৩) কাজ শুরু চায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তবে সাসেক করিডোর -৩ এর আওতায় রংপুর থেকে বাংলাবান্ধা সড়ক চার লেনে হবে; নাকি রংপুর থেকে বুড়িমারি চার লেন হবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সড়কও ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পের আওতায় একই সঙ্গে দুটি সড়কই চার লেন করা হতে পারে। এ প্রকল্পে এডিবি প্রথম পর্যায়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
সাসেক-২ এর অধীন এলেঙ্গা- হাটিকুমরুল- রংপুর সড়কের চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৩২ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। তবে সম্প্রতি বাস্তবায়ন কাজের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এডিবি'র তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে ঋণ ছাড় হলে বাস্তবায়ন কাজের গতি আরও বাড়বে, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তরবঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এছাড়া সাসেক করিডোর -৩ প্রকল্পেরও কাজ শুরু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
২০১৪ সালে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রস্তুতিকরণ অর্থসহায়তায় এলেঙ্গা- হাটিকুমরুল- রংপুর চার লেনের মহাসড়ক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রকল্প প্রতিবেদনে উঠে আসে, দৈনিক এ সড়কে গড়ে ২৮,২৪০টি যানবাহন চলাচল করবে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ দৈনিক যান চলাচলের সংখ্যাটি ৫৭ হাজারে উন্নীত হবে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ছয় অথবা আট লেন উন্নীত করা হবে। ২০২৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করতে চায় সরকার। এর আগে এডিবির অর্থায়নে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হবে। এই মূল প্রকল্পেও অর্থায়ন করবে এডিবি। এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালে ৪০ কোটি ডলার দেবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় এক দশক আথে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপেসওয়ে নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সম্পতি এক্সপেসওয়ে নির্মাণ না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আলাদা ডেডিকেটেড সড়ক নির্মাণের ভাবনা ছিল সরকারের। কিন্ত ,সবদিক বিবেচনায় বর্তমান চার লেনের সড়কটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রামের বন্দরের সংযোগ স্থাপনে আরও একটি সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী বছরে। এই প্রকল্পেও অর্থায়ন করবে এডিবি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে সংযোগ সড়কটি চার লেন করা হবে। এটি কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গেও সংযুক্ত হবে।
তিনি আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ছয় থেকে আট লেনে উন্নয়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ দ্রুত শুরু হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়াও সড়ক পথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে গতি আনতে পদ্মা পাড়ের দৌলতদিয়া থেকে ফরিদপুর হয়ে বরিশাল পযন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব রয়েছে। এডিবির তিন বছরের পাইপলাইনে এ প্রকল্পটিও রয়েছে। ২০২৪ সালে এ প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।
ঢাকা-সিলেট চার লেনের মহাসড়কে ৫০ কোটি ডলার:
এডিবি অর্থায়নে ঢাকা সিলেট সড়ককে চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় গত ফেব্রুয়ারিতে। প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে এ দ্বিতীয় ধাপে ৫০ কোটি ডলার দেবে বলে ইতোমধ্যে ইআরডিকে জানিয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহসড়কে মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিত করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট 'বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ অন্যান্য আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চার লেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে- বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পূর্বে ব্রডগেজ রেলওয়ে ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হবে:
এদিকে এডিবির অর্থায়নে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে দেশের রেলের পূর্বাঞ্চল ব্রডগেজে রূপান্তর হবে।
এছাড়া, কক্সবাজারে মাতারবাড়ি বন্দর ও চট্টগ্রামে বে-কন্টেইনার বন্দর স্থাপন হলে এই যান চলাচল ব্যাপক আকারে বাড়বে। এতে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে । এ বিবেচনায় আগামী তিন বছরে ঢাকা –চট্টগ্রাম –কক্সবাজার রেল লাইনের উন্নয়ন এডিবির পাইপলাইনে বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সাপেক্ষে বেশ কিছু প্রকল্প এডিবি শর্টলিস্ট করছে। লাকসাম-চট্টগ্রাম মিশ্র গেজ, টঙ্গী –আখাউড়া ডুয়েল গেজ, ঢাকা –কুমিল্লা কর্ড লাইন নতুন প্রকল্পে এডিবির অর্থায়নে তালিকায় রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম কক্সবাজারে রেললাইনেও তৃতীয় পর্যায়ের ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে পারে সংস্থাটি।
রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সাপেক্ষে বেশ কিছু প্রকল্প এডিবি শর্টলিস্ট করছে। লাকসাম-চট্টগ্রাম মিশ্রগেজ, টঙ্গী–আখাউড়া ডুয়েল গেজ, ঢাকা –কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পগুলো এডিবির অর্থায়নের তালিকায় রয়েছে।
এছাড়া, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে রেললাইনেও তৃতীয় পর্যায়ের ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে পারে সংস্থাটি।
এব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্ললাহ বাহার বলেছেন, "ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরিত হবে। ইতোমধ্যেই আমরা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি।"
তিনি বলেন, পূর্বে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
"আমরা ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্যও একটি প্রকল্প নিয়েছি। ভবিষ্যতে এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা একটি কর্ডলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারি।"
অগ্রাধিকার তালিকায় আছে নৌপথ উন্নয়ন:
সড়কও রেল লাইনের পাশাপাশি নৌ-পরিবহনে গুরুত্ব দিচ্ছে এডিবি। একারণে আগামী তিন বছরের অগ্রাধিকার তালিকায় বন্দর উন্নয়নসহ নৌপথের কয়েকটি প্রকল্পও স্থাপন পেয়েছে।
এডিবি এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, বন্দরের সঙ্গে সড়ক সংযোগ বৃদ্ধি, সংযোগস্থলে গ্রেড সেপারেশনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, লজিস্টিক্সের উন্নয়ন, মাল্টিমোডাল পরিবহন, স্থলবন্দরের উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ নৌপথের উন্নয়ন এবং ম্যাস র্যাপিড ট্র্যানজিট ও সাবওয়ে নির্মাণে অর্থায়নকে উৎসাহিত করছে।
রেল সেক্টরে, ঢাকা এবং লাকসামের মধ্যে কর্ডলাইন, ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন, লোকোমোটিভ প্রতিস্থাপন, লেভেল ক্রসিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ধীরাশ্রমে একটি নতুন ইনল্যান্ড কন্টেনাইর ডিপো নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ চাওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও ঢাকা পর্যন্ত ডেডিকেটেড কন্টেইনার ট্রেন, আইসিডি ডেভেলপমেন্ট এবং কোল্ড স্টোরেজ অবকাঠামো নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেয়।
এব্যাপারে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ড. পিয়ার মাহমুদ বলেন, এডিবির ঋণ পাইপপাইন চূড়ান্ত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সকল প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে প্রকল্প শুরু করতে দেরী হয়। এজন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন অংশীদারদের তহবিল পাইপলাইনে উপলব্ধ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঋণ পাইপলাইনে পরিবর্তন আসে।
সংযোগের জন্য সড়ক অবকাঠামো অপরিহার্য:
বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "আমরা উপ-আঞ্চলিক সংযোগের বিবিআইএন মোটর ভিহাইকেল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। এখন আমাদের এটি বাস্তবায়নে সড়ক অবকাঠামো উন্নত করতে হবে।"
উল্লেখ্য, প্রতিবেশীদের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলাচল ও পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল (বিবিআইএন) দেশগুলো এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
এর আওতায় মাল্টিমোডাল সংযোগ নিশ্চিতে সড়কের পাশাপাশি সমন্বিতভাবে রেলওয়ে ও নৌপথকেও উন্নত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে নানাবিধ ব্যবস্থার সমন্বয়, সিঙ্গেল উইন্ডো বাণিজ্য নিশ্চিতে শুল্ক ব্যবস্থারও উন্নয়ন সাধন দরকার।
"এভাবে আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারব। বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়লে ভারতের মতো আঞ্চলিক বাজারে দেশের প্রতিযোগী সক্ষমতাও বাড়বে," যোগ করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
"এটি দেশের জন্য ভালো যে এডিবি আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ সড়ক, রেল এবং নৌপথের অবকাঠামোর জন্য সুবিধা বয়ে আনবে।"
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, আন্তঃজাতি সংযোগ স্থাপনের অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করতে হলে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
"ভারত মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশকে ট্র্যানজিট সুবিধা দিয়েছে। এ থেকে আমরাও অনেক লাভবান হতে পারব।"
"আমরা মাতারবাড়ীতে একটি বন্দর নির্মাণ করছি। একটি বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। তার সঙ্গে যদি সড়ক ও রেল অবকাঠামো তৈরি করি তাহলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ মিয়ানমার ও ভুটান আমাদের বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবে, যা আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা অন্য দেশকেও আমাদের বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে লাভবান হতে পারি। সিঙ্গাপুরের বন্দরও এভাবে অনেক দেশ ব্যবহার করছে। এভাবে আমাদের অর্থনীতিতে আরও বৈচিত্র আসবে," যোগ করেন তিনি।