ভারী বৃষ্টিতে মাটি সরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড
পাহাড় ধসের আশঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড। এরইমধ্যে ভারী বৃষ্টিতে সড়কের ব্রিজের পাশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এতে সড়ক থেকে ব্রিজগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাঁচ নম্বর ব্রিজের সংযোগের পশ্চিম পাশে একফুটের বেশি দেবে গেছে।
পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে ১৮টি পাহাড় কেটে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এই সড়ক নির্মাণের পর থেকে কখনো পাহাড় ধসে পড়ছে সড়কে; আর এখন নতুন করে এই সড়কে নির্মিত ছয়টি ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ব্রিজগুলো।
সরেজমিনে সড়কটির পাঁচ নম্বর ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটির দুই পাশে সাইড ওয়াল নির্মাণ না করায় ভারি বর্ষণে ব্রিজের দুই পাশের মাটি সরে যাচ্ছে। ব্রিজের ওপর পশ্চিম পাশে এক ফুটের বেশি জায়গা দেবে গেছে। সিডিএ'র লোকজন মাটি ভরাটের চেষ্টা করছে।
সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, "পূর্বের বাজেটে ব্রিজের পাশে রিটেইনিং ওয়ালের বরাদ্দ না থাকায় তা নির্মাণ করা হয় নি। যার ফলে বৃষ্টিতে ব্রিজের পাশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ডিপিপি রিভাইজের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে ওয়াল নির্মাণ করা হবে"।
এর আগে গত ৮ জুন সড়কটিকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' ঘোষণা করে তিন মাসের জন্য যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সড়কটির নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
সিডিএ সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরুই করেছিল পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে তাও নিরূপণ করেনি সিডিএ। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে দুই দফায় ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করে।
এই সড়ক নির্মাণে ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটে সিডিএ। কিন্তু এরপরও সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আরো ৩ লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটতে ২০২০ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করে সংস্থাটি। যা এখনো অনুমোদন পায় নি।
ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত এই সড়কের নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে একনেকে প্রকল্পটি পাশ হয়। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৩ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
সড়কটির কাজ শুরু হয় ফৌজদারহাট থেকে। প্রথমদিকে রেলওয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিছু কাজও আগায়। ঠিক একই সময়ে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটিকেও একই জায়গায় নিজেদের ক্যাম্পাসের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি তোলে। ফলে রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পুরো প্রকল্পটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এভাবে চলার পর পুনরায় সরকারের কাছে এই রাস্তাটির গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং প্রকল্পটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
নতুন করে হাতে নেয়া প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২১০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে সড়কটি নির্মাণের আদেশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে খরচ কমিয়ে তা ১৭২ কোটি টাকায় করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় খরচ ৩২০ কোটি টাকায় গিয়ে থামে। ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসলে সড়কটি গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।