মহামারিতে ফ্রোজেন ফুডের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অনেক খাতের ব্যবসায়ীদের যখন কোনরকমে টিকে থাকার যুদ্ধ করতে হচ্ছে ঠিক এই সময়ে তরতর করে বাড়ছে ফ্রোজেন ফুডের ব্যবসা। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার দুই বছরে ফ্রোজেন ফুডের বাজার দ্বিগুণেরও বেশি বড় হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাই এ খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। দুই বছরে মানুষের সীমিত চলাফেরা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট চালনায় বিধিনিষেধ আরোপ, ওয়ার্ক ফ্রম হোমসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের অভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, বিশেষত খাবারের ক্ষেত্রে। এ ধারাবাহিকতায় প্রসেসড (প্রক্রিয়াজাত) ফ্রোজেন ফুডের ওপর বাড়তি নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মানুষের।
মানুষ যে ফ্রোজেন ফুড গ্রহণ বাড়িয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকেও।
প্রাণ-আরএফএলের ফ্রোজেন ফুড ব্র্যান্ড 'ঝটপট' নামে পরিচিত। কোম্পানির এই পণ্যটির বিক্রি ২০২০ সালে ৫০-৬০ শতাংশ এবং চলতি বছরে এসে ৩০-৩৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। গোল্ডেন হার্ভেস্ট বলছে, সবশেষ দুই বছরে পণ্যের বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে এবং তা এখনো বাড়ছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষজন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার ছোট খাবারের দোকানে কম যাচ্ছে এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকস জাতীয় হিমায়িত খাবারে আগ্রহ দেখাচ্ছে"।
তিনি জানান, এ সময় শুধু দেশেই নয়, রপ্তানিতেও বাড়তি গতি এসেছে। রপ্তানিতে এই প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ।
জানা গেছে, দেশের বাইরে পরোটা ও ভেজিটেবল স্ন্যাকসের চাহিদা বেশি। এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে 'ঝটপট' এর পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
বিদেশের মত দেশেও ফ্রোজেন ফুডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে পরোটার। এছাড়া নাগেট, চিকেন সমুচা, চিকেন স্প্রিং রোল, চিকেন সসেজ, চিকেন নাগেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদির চাহিদা বেশি।
করোনা মহামারিতে ছোট-বড় বেশিরভাগ খাবার দোকান বন্ধ। অলিগলিতে যেগুলো খোলা রয়েছে সচেতনতার কারণে সেখানে বিক্রিও কম। তাই বলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা সিঙ্গারা, সমুচা, পুরিসহ ভাজাপোড়া খাওয়া বন্ধ করেনি।
বরং সচেতন নাগরিকেরা রেস্তোরাঁয় না গিয়ে ভাজাপোড়ার চাহিদা মেটাচ্ছেন প্রসেসড ফ্রোজেন ফুড বা রেডি-টু-কুক ফুডের মাধ্যমে। যাদের আবার একটু বাড়তি আয় রয়েছে তাদের চিকেন সসেজ, চিকেন নাগেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের দিকে খানিক ঝোঁক।
পরোটার বিক্রি বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলেন, যে মানুষগুলো আগে হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসে বা সেখান থেকে কিনে নিয়মিত পরোটা খেত তারা এখন বাসাতেই প্রসেসড পরোটা নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে করোনার ঝুঁকি নিরসনে বাসায় সাহায্যকারী লোকও রাখা বন্ধ করে দিয়ে এসব প্রসেসড ফুডের ওপর নির্ভর করছে।
সুপারশপ মিনাবাজার ও স্বপ্নের কর্মকর্তারা জানান, সুপারশপগুলোতে ফ্রোজেন ফুডের বিক্রি অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে বিক্রিও হচ্ছে খুব দ্রুত।
এ বিষয়ে গোল্ডেন হার্ভেস্টের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. শহিদুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "চাহিদা যত দ্রুত বাড়ছে তত দ্রুত আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারছি না। তবে প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি উৎপাদন বৃদ্ধির। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মার্কেটের আকারও দ্রুত বড় হচ্ছে।"
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে ১৯টি কোম্পানি ফ্রোজেন ফুডের উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এ তালিকায় সামনের সারির উৎপাদনকারীর মধ্যে গোল্ডেন হার্ভেস্ট, কাজী ফার্ম, প্রাণ, সিপি, ইউরো ফুড, লামিসা, ইগলু উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ফ্রোজেন ফুডের বাজার এক অঙ্কে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলেও করোনা এসে এটাকে দ্বিগুণে নিয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোন গবেষণা না থাকায় প্রবৃদ্ধি হার ঠিক কত তা নির্দিষ্ট করে তথ্য দিতে পারেনি কেউ।
তবে তারা বলছেন, গত দুই বছরে ফ্রোজেন ফুডের বাজার দ্বিগুণেরও বেশি বড় হয়েছে; এর আকার প্রায় ৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।