মার্কেট খুললেও বিক্রি কম, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় দেড় মাস ধরে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ গত ১১ আগস্ট থেকে তুলে দেওয়ায় এবং যানবাহন চলাচলসহ মার্কেট, দোকানপাট, শপিং মল স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার কথা বলা হলেও স্বাভাবিক সময়ের মতো বিক্রি নেই মার্কেটগুলোতে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হওয়ায় মানুষের ভিড় বেড়েছে আর উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান ও শপিং মল খোলা রাখার অনুমতি দিলেও অধিকাংশ দোকানপাটই তা মানছে না। আর খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে রাত ১০টা পর্যন্ত হোটেল খাবার পরিবেশনের কথা বলা হলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউন শেষে সবকিছু খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে বিক্রি ভালো হলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা কমেছে। এখন স্বাভাবিক সময়ের মতো বিক্রি না হলেও তাদের প্রত্যাশা আস্তে আস্তে মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সমাগম বাড়বে এবং বিক্রি ভালো হবে।
ক্রেতারা বলছেন সবকিছু একসাথে খুলে দেওয়ায় কাজে এবং অর্থনীতিতে গতি আসলেও সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় না এনে এভাবে সব খুলে দেওয়া ঠিক হয়নি। আর ভিড়ের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির কথা ভুলে যান বলে তাদের দাবি।
শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকার কয়েকটি শপিং মল, বসুন্ধরা শপিং সেন্টার এবং নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডের মার্কেটগুলো ঘুরে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে কথা বলে এ চিত্র দেখা যায়।
নিউমার্কেট এলাকার চাঁদনী চক, গাউসিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। তবে অধিকাংশ ক্রেতাই ফুটপাতের জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছেন আর কেনাকাটা করছেন খুব অল্প রসংখ্যক ক্রেতাই। মার্কেটগুলোর ভিতরে অধিকাংশ দোকানীরাই বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার মার্কেটের ভেতরে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তবে মার্কেটের মধ্যে জায়গা কম থাকায় কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে জটলা।
ক্রেতারা ফুটপাতে হকারদের থেকে একজন আরেকজনের সঙ্গে গা-ঘেঁষেই করছেন কেনাকাটা। আবার কেউবা গা-ঘেঁষেই যাওয়া আসা করছেন। অনেককে দেখা যায় মাস্ক নামিয়ে কেনাকাটা করতে।
নিউ মার্কেট এলাকার নূর ম্যানশন এর তুষার ফেব্রিকস এর দোকানী কবির হোসাইন টিবিএসকে বলেন, "বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনেক কম। লোকজনই আসছে না তেমন। যদি ৪০ বছরের অধিক বয়সী লোকদের ভ্যাকসিন দিয়ে খুলে দিতো তাহলে হয়তো ভালো হতো"।
রাফিন ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম টিবিএসকে বলেন, "স্বাভাবিক সময়ের এমন সিজনে ৮/১০ হাজার টাকা বিক্রি হতো কিন্তু এখন ২/৩ হাজার টাকার মতো হয়। বাসায় বসে থাকার থেকে কিছু বেচাবিক্রি হলে সেটা খারাপ না। লোকজন কিছু আসছে কিন্তু বিক্রি কম"।
সাথে এক সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা লাবনী আক্তার টিবিএসকে বলেন, "গত তিন দিনে আজকে বের হয়েছি। দেখে তো স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে তবে করোনা নিয়ে ভয় সবসময়ই কাজ করছে"।
'বিচিত্রা' প্রসাধনীর দোকানী শামিম হোসাইন টিবিএসকে বলেন, "প্রথম দিন বিক্রি ভালো ছিল কিন্তু এখন খুব ভালো না। স্বভাবিক সময়ের থেকে ৫০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। কিছু সময় গেলে বিক্রি বাড়বে"।
অধিকাংশ বিক্রেতারাই বলছেন, কিছু ক্রেতা আসছে, দেখে চলে যাচ্ছে। যেহেতু সরকার সব খুলে দিয়েছে, তাই আশা করছি সামনে মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি ভালে হবে আর আমাদের বিক্রিও বাড়বে।
বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের দোকানিরাও বলছেন তাদের বেচাকেনা কম স্বাভাবিক সময়ের থেকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার বিকাল থেকে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। বসুন্ধরার কাপড়ের দোকানের থেকে প্রসাধনী আর মোবাইলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের ক্যাটস আই এর ম্যানেজার রবিউল হাসান টিবিএসকে বলেন, শুক্রবার হওয়ায় কাস্টমার একটু বেশি আসছে। গত দুদিন তেমন কাস্টমার ছিল না।
স্বাভাবিক সময়ের থেকে ৪০% বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে রবিউল বলেন, ২/১ সপ্তাহ গেলে বেচাকেনা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি। এখনও সবার মধ্যে করোনা ভীতি কাজ করছে তাই একদম প্রয়োজন ব্যতীত কেউ কেনাকাটা করতে আসছেন না। আমাদের মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন। তাছাড়া যদি দোকানের কাস্টমার কিংবা কর্মচারীদের কারো মাস্ক না থাকার বিষয়ে ৩ বার অভিযোগ গেলে জরিমানা করে এবং দোকান বন্ধ করে দেয়।
মিতুয়া ফ্যাশনের রাজিব মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, "খোলার পরে লোকজন একেবারেই কম আসছে। গতকাল এবং আজ এখন পর্যন্ত একটি ড্রেসও বিক্রি হয়নি। করোনা আতঙ্ক বেশি থাকায় কাস্টমার কমই আসছে"।
কেনাকাটা করতে আসা জিল্লুর হাসান টিবিএসকে বলেন, "তিন দিন হলো মার্কেট খুলে দিয়েছে আজকে আসলাম কেনাকাটা করতে। তবে যেভাবে করোনা বাড়ছে এসময়ে সবকিছু এভাবে খুলে দেওয়া ঠিক হয়নি"।
কেনাকাটা থেকে ভিড় বেশি ফুডকোর্ট ও রেস্টুরেন্টগুলোতে
লকডাউন তুলে দেওয়ার পরে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো খুলে দেওয়ায় এবং ধারণক্ষমতার অর্ধেক পরিমাণ ক্রেতাদের বসার ব্যবস্থা করার নিয়ম বেঁধে দিলেও তা মানছে না রাজধানীর অধিকাংশ ফুডকোর্ট ও রেস্টুরেন্ট। বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের ফুডকোর্ট, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার ফুডকোর্ট ও রেস্টুরেন্টগুলো ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিকাল থেকেই বাড়তে থাকে ফুডকোর্টগুলোতে ভিড়। তবে বেশি ভিড় দেখা যায় মার্কেট ও শপিং সেন্টার সংলগ্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে।
বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের ফুডকোর্টে খেতে করতে আসা অন্তত দশজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, অধিকাংশই জানেন না অর্ধেক আসন খালি রেখে রেস্টুরেন্ট চালাতে হবে। জটলা হয়েই খাচ্ছিলেন অধিকাংশ। আর একসাথে খেতে গিয়ে এবং আড্ডার ছলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায়ই থাকে না অনেকের।
একটি ফুড কোর্টের ম্যানেজার রবিউল টিবিএসকে বলেন, "এতদিন বন্ধ ছিল আমাদের দোকানগুলো এখন একটু লোকজন আসতে শুরু করেছে তাই ফেরাতে পারছি না কাউকে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার পরিবেশন ও খেতে অনুরোধ করি"।
নিউ মার্কেট এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী শফিক বলেন, "আমরা জানি না কয়জন বসাতে পারবো। সব খুলে দিয়েছে তাই আমরা খাবার বসেই খাওয়াচ্ছি"।
তবে অধিকাংশ দোকানীরা অর্ধেক আসন খালি রেখে খাবার সরবরাহের বিষয়টি জানলেও শুক্রবারে লোকজনের ভিড়ে তা মানতে পারছেন না বলে জানান।