আমদানি খরচের ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা বাঁচাতে পারে দিনাজপুর লৌহ আকরিক ক্ষেত্র
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় অবস্থিত দেশের প্রথম ম্যাগনেটাইট (লোহা আকরিক) ক্ষেত্রের সম্পদ ব্যবহার করা গেলে রড ও ইস্পাত উৎপাদন শিল্প কাঁচামাল আমদানির খরচের ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা বাঁচাতে পারে।
এ উৎপাদন শিল্পটি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা থেকে কাঁচামাল আমদানিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। তাছাড়া, দেশের অবকাঠামো খাত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, হাকিমপুরের ম্যাগনেটাইট ক্ষেত্রে ৬২.৫ কোটি টন লোহার আকরিক মজুদ আছে।
২৫ শতাংশ পুনরুদ্ধারযোগ্য রিজার্ভ এবং কাঁচামালের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা (৫০ লক্ষ টন) বিবেচনায় রেখে হাকিমপুর ক্ষেত্র আগামী ৩০ বছরের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে বলে জানায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। এ কাঁচামালের অর্থনৈতিক মূল্য হবে ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা।
তবে সম্প্রতি আবিষ্কৃত এ ক্ষেত্রে উৎপাদনের কাজ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের গবেষণার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে, যা সম্পূর্ণ হতে বেশ সময় লাগবে।
নসরুল হামিদ বলেন, এ ক্ষেত্রের আবিষ্কার টেকসই উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ আহরণের বিষয়ে গবেষণার কাজে একটি ক্ষেত্র তৈরির জন্য জিএসবির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
২০১৯ সালের জুন মাসে হাকিমপুরের ইসাবপুরে ম্যাগনেটাইট ক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য জাতীয় সংস্থা জিএসবি। খনিজ সম্পদের সন্ধানে হাকিমপুর উপজেলা কার্যালয় থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি কূপের ৫০ ডেসিমেল গভীরতা পর্যন্ত খনন করে লোহার আকরিক খুঁজে পেয়েছিলো তারা।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের তথ্যে দেখা যায় যে, হাকিমপুরে ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মাটির নিচের বিভিন্ন স্তরে খনিজের রিজার্ভ পাওয়া গেছে। তবে এক্ষেত্রে, ১৩০০ থেকে ১৫০০ ফুট নিচের স্তরগুলোতে রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভ।
ক্ষেত্রটির মোট সাম্ভাব্য রিজার্ভের ২৫ শতাংশ পুনরুদ্ধারযোগ্য, এবং এর পরিমাণ প্রায় ১৫.৬ কোটি (১৫৬ মিলিয়ন) টন। গত বছরের এক রিপোর্টে এ তথ্য দিয়েছিলো জিএসবি।
এতে বলা হয়, লোহার কাঁচামালের বর্তমান আমদানির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এ রিজার্ভের অর্থনৈতিক মূল্য হবে প্রায় ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা।
শিল্প সূত্র মতে, বর্তমানে প্রতি টন লোহার কাঁচামালের দাম প্রায় ১১৯ ডলার।
এদিকে জিএসবির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) ড. মোহাম্মদ শের আলী বলেছেন, তাদের কাজ হচ্ছে দেশের মাটিতে সম্পদ খুঁজে বের করা। তিনি বলেন, 'আমরা নিজেদের কাজ করতে যেয়েই হাকিমপুর ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে শক্তি বিভাগ।'
এছাড়াও, রিজার্ভ সম্পর্কে আরও সঠিক তথ্য ও এর বিকাশের জন্য একটি বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন ছিলো বলে যোগ করেন তিনি।
প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে রিজার্ভের ৫০ শতাংশ ইতিবাচক প্রতিফলন রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য প্রয়োজন একটি বিস্তারিত গবেষণা।
তবে গবেষণা ছাড়াও এ ধরণের গভীরতা থেকে লোহা আকরিক উত্তোলন আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এব্যাপারে জিএসবির কর্মকর্তারা সুইডেনে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম খনির কথা উল্লেখ করেন। ২০০৮ সালে সুইডেনের কিরুনা খনির ৪ হাজার ৪৭৮ ফুট গভীরতা থেকে লোহার আকরিক উত্তোলন করা হয়েছিলো।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, রিজার্ভ সম্পর্কে আরো সঠিক তথ্য পেতে তারা পেট্রোবাংলার সাথে একসঙ্গে একটি গবেষণা চালাবে। কিন্তু তহবিল ব্যবস্থাপনার কারণে এতে কিছুটা সময় লাগবে।
ক্রমবর্ধমান সরকারি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং বেসরকারি নির্মাণ কাজের জন্য দেশে ইস্পাতের চাহিদা বেড়ে চলেছে। তবে এ অবস্থায়ও শিল্প সম্পূর্ণরূপে কাঁচামালের আমদানির উপর নির্ভরশীল।
এদিকে, বর্তমানে ইস্পাত রি-রোলিং কারখানাগুলি বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন কাঁচামাল আমদানি করে বলে জানান বিএসআরএম গ্রুপের প্রধান অর্থ-বিষয়ক কর্মকর্তা এবং কোম্পানির সচিব শেখর রঞ্জন কর।
তিনি বলেন, কাঁচামালের স্থানীয় উৎস এই শিল্পের জন্য স্বস্তির একটি বিষয়।
অবশ্য, হাকিমপুরে যে লোহার আকরিক রয়েছে সেটি কারখানায় প্রয়োজনীয় লোহা কিনা এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
তবে তিনি আরও বলেন, এ লোহা ব্যবহারের বিষয়টি নির্ভর করবে যে মূল্যে খনি থেকে তাদের শিল্পতে এটি সরবরাহ করা হবে তার ওপর।