পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার
করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের প্রায় পাঁচ মাস পর আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে শর্তসাপেক্ষে খুলছে কক্সবাজার সৈকত ও পর্যটন স্পট। ফলে দীর্ঘ নীরবতা ভেঙ্গে উচ্ছ্বাসে বালিয়াড়ি রাঙ্গাতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত হয়েছে কক্সবাজার। ইতোমধ্যে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হোটেল-মোটেল ও রেস্তােরাঁগুলোও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন সেবার উপযোগী করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে খোলার খবরে বুধবার বিকেল থেকেই লোকজন সৈকতের বালিয়াড়িতে ঢেউয়ের আঁচড় মাড়িয়েছে।
এতে দীর্ঘ জনশূন্য থাকা কক্সবাজারের পর্যটন জোনে প্রাণচঞ্চলতা ফিরেছে। সৈকত তীরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ ও রেস্তােরাঁ প্রহর গুনছে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে।
কক্সবাজারের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি, ইনানীর পর্যটন স্পট, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, নেচারপার্ক, বার্মিজ মার্কেট, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রামুর রামকুট বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোকে আকর্ষণীয় করে পরিস্কার করা হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে যাবার কোন তোড়জোড় নেই।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, "অতীতের ক্ষতি কখনো পোষানো যায় না। এরপরও লকডাউনে বেকায়দায় পড়া ব্যবসাটা আগের মতো সচল করার প্রয়াস থাকবে। যে ক্ষতি হয়েছে এবং যে দেনা বেড়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। এরপরও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি"।
তারমতো একই অভিব্যক্তি সী নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজীসহ আরো অসংখ্য হোটেল ব্যবসায়ীর। পর্যটক টানতে হোটেলগুলো কক্ষভাড়ায় লোভনীয় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক আসা শুরু হয়নি বলে জানান ম্যানেজার শফিক।
বুধবার হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ হোটেল ও গেস্ট হাউসের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শেষ করে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কাজে ফিরছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সৈকতের ছোট ছোট দোকান, হকার, শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলো খোলা হয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছে অনেকেই। সৈকতে দায়িত্বে থাকা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে এসব পর্যটকরা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে নামে। বুধবার দুপুরে সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে এ দৃশ্য দেখা গেছে। তবে, ইনানী অংশে পুরোটাই ফাঁকা ছিলো।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, "সরকার পর্যটন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। এ অবস্থায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সতর্কতার সাথে কাজ করছে সবাই"।
হোটেল,মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "বেশিরভাগ হোটেল মালিকরা কক্ষভাড়ায় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। কিছু কিছু হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে বলে জেনেছি। তবে কেউ যেন ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ ভাড়া না দিতে পারে সে জন্য তদারকি করা হচ্ছে"।
তারকা মানের হোটেল সি-গাল, সায়মান বিচ রিসোর্ট, কক্স-টুডে, লং বিচসহ বিভিন্ন হোটেলে কক্ষ ভাড়ায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, "করোনায় স্থবিরতা এসেছে পর্যটন খাতের ব্যবসায়। গত ৫ মাসে এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়ে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে। ব্যবসা সচল থাকলে ব্যবসায় গতি আসবে বলে আশা রাখছি"।
কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, "করোনায় ধুঁকছে সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প। গত বছরের মতো এ বছরও বিপুল লোকসান গুনেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার"।
তবে, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা সচলে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা কঠোরভাবে মানতে হবে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে বা ৫০ শতাংশের বেশি হোটেল কক্ষ ভাড়া দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন ডিসি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, "বিভিন্ন উৎসবে আমাদের যেরকম প্রস্তুতি থাকে এখনো সেভাবে নিরাপত্তা সেবায় প্রস্তুত আমরা। প্রতিটা পয়েন্টে টীম কাজ করবে। মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের সাথেও একীভূত হয়ে কাজ করবো। তথ্য পেয়েছি কমবেশি পর্যটক সৈকতে আসবে। জীবন-জীবিকা এবং বিনোদন দরকার, তাই বুধবার যারা সৈকতে এসেছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়নি"।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়েছিল পর্যটন। এরপর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হলেও চলতি বছরের ৫ এপ্রিল আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। দীর্ঘ ৫ মাস পর সেটি আবার সচল হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট)।