অন্ধ হয়েও যেভাবে অ্যাকশন তারকা হয়ে উঠলেন অ্যাডাম মর্স
অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজে সুস্থ-সবল অভিনেতাদেরই যখন স্টান্ট দৃশ্যগুলো করতে ঘাম বেরিয়ে যায়, কিংবা আসল অভিনেতার পরিবর্তে স্টান্টম্যান ব্যবহার করা হয়, সেখানে অন্ধ অভিনেতা অ্যাডাম মর্স নিজের স্টান্ট দৃশ্য নিজেই করছেন!
অ্যাকশন ঘরানার অ্যাপল টিভি সিরিজ 'সি'র মাধ্যমে পর্দায় হাজির হবেন মর্স। সিরিজের শুটিংয়ের সময় কোনো ছড়ি বা গাইড কুকুর ব্যবহার না করেই নিজের স্টান্ট দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি।
লন্ডনে নিজ বাড়িতে বসে ৩১ বছর বয়সী অভিনেতা জানান, এই কাজের জন্য তিনি কিছুদিন ফাইট কোরিওগ্রাফারদের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন।
"তারা আমার প্রতি বেশ সংবেদনশীল ছিলেন। তারা আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই কাজগুলো ধীরে ধীরে এগোতে চাইছিলেন অথবা স্টান্টম্যান দিয়ে করানোর প্রস্তাব তুলেছিলেন। কিন্তু আমি তা নিষেধ করে জানাই, নিজেই পারব। অনুশীলন চলাকালে একদিন এক কোরিওগ্রাফার আমার কাছে জানতে চান, 'আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কি আসলেই চোখে দেখেন না?'"
"তার এই প্রশ্ন করার মধ্যেই আমার সাফল্য। কারণ 'তলোয়ার যুদ্ধ' অনুশীলনে আমি ওই ঘরে থাকা আর দশজন মানুষের মতোই দক্ষতা দেখিয়েছি। আমি ছাড়া তাদের বাকি সবারই দৃষ্টিশক্তি ছিল ২০-এ ২০। সে কারণেই ওই কোরিওগ্রাফারের মনে খানিকটা সন্দেহ জন্মায়। ঠিক এটিই আমাকে এগিয়ে নেয়! আমি সবার প্রত্যাশার পারদ ছাপিয়ে যেতে চাই", বলেন মর্স।
মর্স শুধু একজন অভিনেতাই নন; পরিচালক, লেখক এবং প্রযোজকও। ২০০৮ সালে বিরল এক মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের কারণে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখনো হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন। তাই দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত ছিল।
আগামী ২৭ আগস্ট মর্স অভিনীত সিরিজ 'সি'র প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতায় ভরা এক আদিম সমাজে একটি ভাইরাসের কারণে মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে- এমন প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে সিরিজটির কাহিনি।
সিরিজে একজন যোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেসন মোমোয়া, যিনি নিষ্ঠুর রানি 'কেন' (সিলভিয়া হেকস অভিনীত) এবং জাদুকরী শিকারিদের হাত থেকে তার দুই সন্তানকে বাঁচাতে চান। সিরিজে রানির সহযোগী ও জাদুকরী শিকারি ফ্রাইয়ের ভূমিকায় দেখা যাবে মর্সকে।
'সি' সিরিজে ঘোড়ায় চড়া ও তলোয়ার চালনার পাশাপাশি স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের ডায়লগ আয়ত্বে এনেছেন মর্স। তার ভাষ্যে, আত্মবিশ্বাসই সবকিছু। বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানার সময় থেকে তিনি যে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন, সেটিই তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে।
এছাড়াও, দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর স্মৃতিশক্তি আগের চেয়ে বেড়েছে তার, যা তাকে অভিনয়ে সাহায্য করে।
মর্স বলেন, 'আমি খুব খারাপ ও অন্ধকার একটা সময় পার করেছি। রুপালি পর্দায় অভিনয় করা এবং নিজে সিনেমা বানানোর স্বপ্ন আমি সব সময় দেখতাম। ওই সময়টায় এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, সবকিছু ছেড়ে দিই! তাই নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমি কিছুটা সময় নিয়েছি।'
'আর এটাই ছিল একটা আত্মিক পর্যায়ের আরম্ভ- যখন আমি দৃষ্টিশক্তি হারালাম; তবে মেনে নিলাম, এটা কোনো অভিশাপ নয়। বরং এটা কীভাবে আমার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে, তা নিজেই ঠিক করেছিলাম,' যোগ করেন তিনি।
মর্স আরও বলেন, 'কীভাবে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা ও ইতিবাচক চিন্তা করা যায়, তার জন্য প্রতিদিনই আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। আমার বর্তমান অবস্থায় থেকেও কীভাবে একজন শিল্পী হিসেবে উন্নতি সাধন করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছি। কারণ এর মাধ্যমেই নিজেকে আশীর্বাদপুষ্ট মনে করি।'
'অভিনয় আমাকে নতুন একটা পথ খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি করতে শেখায়', বলেন তিনি।
তবে মর্স যে সব সময় অন্ধের চরিত্রে অভিনয় করতে চান না, তা-ও জানালেন। তিনি চান মানুষ তাকে এমন সব ভূমিকায় দেখুক, যা হয়তো একেবারেই অপ্রত্যাশিত। দর্শকদের নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে চমকে দিতে চান তিনি। হয় কোনো তেজি গাড়ির পেছনে ধাওয়া করছেন কিংবা যুদ্ধের ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন- এমনসব চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী মর্স।
'শুধু সাধারণ মানুষের ভূমিকায় থাকার সম্ভাবনা আমার মধ্য থেকে মুছে গেছে। সে কারণেই অভিনেতা হতে চেয়েছি। তাই আমার লক্ষ্য, বিশ্বের প্রথম অন্ধ অ্যাকশন হিরো হওয়া', বললেন মর্স।
-
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট