অর্গানিক কটন সংক্রান্ত ইস্যু সমাধানে এগিয়ে এসেছে ভারত সরকার
ভারত থেকে ১৬১০০ টন অর্গানিক কটনের আমদানিকারককে ট্রানজেকশন সার্টিফিকেট (টিসি) প্রদান না করা সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির মিনিস্ট্রি অফ টেক্সটাইল। গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক সভায় যত দ্রুত সম্ভব, এই ইস্যুটি সমাধানের জন্য সেখানকার সরবরাহকারীদের অনুরোধ জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরপরই কটন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানিয়েছে, বুধবারেই একটি প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্গানিক কটনের টিসির বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
এছাড়া একই দিন আরও দুই সরবরাহকারীও ইস্যুটির সমাধানে এগিয়ে এসেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসরাক টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি বুধবারই তাদেরকে (সাপ্লায়ার) চিঠি দিয়েছি, সমাধান হয়ে গেছে"।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, "অর্গানিক কটনের টিসি সংক্রান্ত সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য ভারতের মিনিস্ট্রি অব টেক্সটাইল সেদেশের সাপ্লায়ারদের নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি আমি বুধবার হাতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে গুজরাট কটন কর্পোরেশন আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। অপর একটি প্রতিষ্ঠানও সমাধান করেছে"।
"দ্রুত এই ইস্যুটির সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা ভারতের মিনিস্ট্রি অব টেক্সটাইল সহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ধন্যবাদ জানাই", বলেন তিনি।
গত এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ভারতের ৯ সরবরাহকারীর কাছ থেকে বাংলাদেশের ১৮ আমদানিকারক ১৬১০০ মেট্রিক টন অর্গানিক কটনের টিসি পাচ্ছিলেন না। কটন সরবরাহের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অর্গানিক কটন সম্পর্কিত সনদ বা ট্রানজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই কটনে সুতা তৈরি করে বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলোর বেশিরভাগই ইতিমধ্যে স্থানীয় ও বিদেশী বায়ারের কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু কোন কোন আমদানিকারক এক বছরেও এই টিসি না পাওয়ায় তারা বায়ারকে তা দিতে পারছেন না। কিন্তু বায়ার এই টিসি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ইয়ার্ন বা ফেব্রিক সাপ্লায়ারদের চাপ দিচ্ছিলেন, কেউ কেউ ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন। এর সঙ্গে ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তারা।
উদ্বিগ্ন টেক্সটাইল মিল মালিকরা ভারতের সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ কেউ এক বছরেও সমাধান পান নি। এমনকি কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগও করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে জানা যায়। এরপর বিটিএমএ গত মাসের শেষ দিকে ভারতের হাইকমিশনারসহ দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইস্যুটি দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয় দেশটির মিনিস্ট্রি অব টেক্সটাইল থেকে। অর্গানিক কটন রপ্তানির পর টিসি দিতে না পারা দেশটির ৯ রপ্তানিকারককে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, "... এভাবে প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা সামগ্রিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। অতএব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্রেতার সাথে এই বিষয়টি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সমাধান করার নির্দেশ দেওয়া হলো"।
চিঠিতে দেশটির আলোচ্য কটন সাপ্লায়ারদের আরো বলা হয়, "আপনাদের ক্রেতার সাথে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে এবং সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের কাছ থেকে একটি চিঠি জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে"।
এর মধ্যেই বুধবার 'সনদহীন ভারতীয় অর্গানিক তুলা আমদানির খেসারত দিচ্ছেন স্পিনিং মিল মালিকরা' শিরোনামে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার দেশটির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গুজরাট কটন কর্পোরেশন, বিটিএমএ-তে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, "আমরা ইমেইলের মাধ্যমে মুলতুবি টিসি সমস্যা নিষ্পত্তির প্রস্তাব পাঠিয়ে আমাদের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি"।
চিঠিতে আরো বলা হয়, "এই অর্গানিক টিসি ইস্যু ব্যতীত আমরা আমাদের সম্মানীয় ক্রেতাদের সাথে আগে কখনও খেলাপি হইনি। অর্গানিক টিসি ইস্যু ছাড়া বিটিএমএ আমাদের বিরুদ্ধে কোনোরূপ দোষ খুঁজে পাবে না"।
তবে এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের সরবরাহ চক্র প্রধান মো. আতাউর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তাদের রপ্তানিকারক এখনো যোগাযোগ করেন নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে ৭.৫ মিলিয়ন বেল কটন আমদানি করেছে, যার ২৬ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে। তবে এর মধ্যে কী পরিমাণ অর্গানিক কটন এসেছে, তার সুনির্দিষ্ট কোন হিসাব নেই বিটিএমএ'র কাছে। মূলত কটন উৎপাদনকালে কোন ধরণের ক্ষতিকর সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বলে এটি অর্গানিক কটন হিসেবে পরিচিত। সাধারন কটনের চেয়ে এই কটনের দামও বেশি।