কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের দায় নিল আইএস
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে দুই দফায় ভয়াবহ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) খোরাসান প্রদেশ শাখা।
এর আগে তালেবানও এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, এই হামলা আইএসেরই কাজ। বিবিসির খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ছয়টা নাগাদ বিমানবন্দরের কাছে পরপর দু'টি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন আমেরিকান সেনা। আহত হয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি।
কাবুল থেকে বিস্ফোরণের পর যেসব ভিডিও এবং ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে লাশের ওপর লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
১৫ আগস্ট কাবুল-পতনের পর থেকেই বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য ভিড় জমান হাজার হাজার আফগান। গতকালও সকাল থেকে বিমানবন্দরের ফটকের সামনে জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। সেই ভিড়ের মধ্যেই বিমানবন্দরের নিকটবর্তী ব্যারন হোটেলের কাছে প্রথম বোমা হামলাটি হয় বলে জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী আফগানদের ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত ছিল ব্যারন হোটেল।
পরবর্তীতে শুরু হয় গোলাগুলি। এরপর বিমানবন্দরের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ অ্যাবি গেটের কাছে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে।
গত কয়েক দিন ধরে পেন্টাগন বারবার সতর্ক করেছিল, যে কোনও সময়ে বিমানবন্দরে হামলা চালাতে পারে আইএস। আফগানিস্তানে এখনও আটকে রয়েছেন প্রায় ১৩০০ আমেরিকান নাগরিক। বৃহস্পতিবার এক বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে কাবুলে আমেরিকান দূতাবাস জানিয়েছিল, যারা গতকাল কাবুল ছাড়ছেন বলে আগে থেকেই ঠিক করা আছে, তারাই যেন শুধু বিমানবন্দরে যান। অন্যরা যেন বিমানবন্দর চত্বর অবশ্যই এড়িয়ে চলেন। একই সুরে ব্রিটেন, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াও তাদের নাগরিকদের সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল।
প্রতিদিনের মতো গতকালও আমেরিকান ও বিভিন্ন আমেরিকান সংস্থায় কাজ করা আফগান ও তাদের পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য এই বিমানবন্দর থেকে একের পর এক বিমান ছেড়েছে। বিকেলে একটি সি-১৭ বিমান টেক অফ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে পেন্টাগন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের আগে ওই বিমানে যাত্রীদের তোলার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যে আমেরিকান বিমানটি কাবুলের মাটি ছাড়ে।
৩১ আগস্টের পরে আর সে দেশে আমেরিকান সেনাকে রাখা নিরাপদ নয় বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানিয়েছিল পেন্টাগন। গতকাল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, কাবুল বিমানবন্দরে আইএস হামলার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলা হতে পারে ভেবে ভয়ে রয়েছে তালেবানও। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপি একটি ব্রিটিশ রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ''হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।'' পরে একটি আমেরিকান চ্যানেল মন্ত্রীকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, ''আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কি কাবুলে কোনও হামলা হতে পারে?'' হিপি উত্তর দেন, ''হ্যা, আমাদের গোয়েন্দা তথ্য সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে।'' মন্ত্রী আরও জানান, এই হামলা যথেষ্ট বড় আকারের হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এত স্পষ্ট সতর্কবার্তা থাকলেও এই হামলা এড়ানো গেল না কেন? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে কাবুল বিমানবন্দর ও তার চারপাশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে। গত কয়েক দিন ধরে এই বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু যারা বিমানে উঠছেন, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি মানুষ রয়ে যাচ্ছেন পিছনে। বিমানবন্দরের ভিতরে রয়েছেন প্রায় সাত হাজার আমেরিকান সেনা আর ন্যাটো বাহিনী। তারাই ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাবেন। কিন্তু বিমানবন্দরের বাইরে চূড়ান্ত অরাজকতা। তালেবান রক্ষীরা ভিড় সামলানোর চেষ্টা করলেও বিশেষ সাফল্য মিলছে না। মাঝেমাঝে এই তালেবান রক্ষীরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালান। তাতে হুড়োহুড়ি আরও বেড়ে যায়।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা