দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যৌথভাবে গাজীপুরে রেলওয়ের আইসিডি নির্মাণ করতে চায় সরকার
শেষ পর্যন্ত সরকারি–বেসরকারি অংশদারিত্বেই (পিপিপি) হচ্ছে গাজীপুরের ধীরাশ্রম রেল ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো( আইসিডি)। দুবাই ভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড- এর সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, ডিপি ওয়ার্ল্ড- এর প্রাথমিক সম্মতি পাওয়া গেছে। শর্তাবলী নির্ধারণ করে চূড়ান্ত চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চলেছে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. নাজমুস সায়াদাত বলেন, "ডিপি ওয়ার্ল্ডকে পাঠানোর জন্য একটি ডকুমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে, সে জন্য ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান্টি বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।"
ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরের ধীরাশ্রম রেলস্টেশনের কাছে প্রায় ১৬০ একর জায়গায় নির্মাণ হবে এ আইসিডি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব অনুয়ায়ী ৩০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। বাস্তবায়ন শেষ হলে কমলাপুর আইসিডি বৃহৎ পরিসরে ধীরাশ্রমে স্থানান্তরিত হবে এবং রেলপথে কন্টেইনার পরিবহন ৩০ শতাংশ পৌঁছাবে।
পিপিপিতে একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিডি স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত সম্মতি পায়।
এর মধ্যে বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে আইসিডি নির্মাণের প্রকল্পটি পিপিপিতে না করে নিজস্ব অর্থায়ন করার সিন্ধান্ত নেয় রেলওয়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পে ২০ কোটি ডলার ঋণদানের আশ্বাস দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি। যার ভিত্তিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে এর আগে ২০২০ সালের শুরু দিকে ডিপি ওয়ার্ল্ড ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সিদ্ধান্ত বদলে সংস্থাটির ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রস্তাব থেকে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
মূলত বন্দর ও কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং পরিচালনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের কারিগরি দক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়েছে প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে ফিরে আসে সরকার। ডিপি ওয়ার্ল্ডও সরকারের সিদ্ধান্তকে আমলে নেয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিত্তিক লজিস্টিকস খাতের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড। কার্গো লজিস্টিকস, পোর্ট টার্মিনাল অপারেশন্স, মেরিটাইম সার্ভিস ও মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল পরিচালনায় তাদের বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পিপিপি'র আওতায় প্রস্তাবিত তিনটি টার্মিনালের একটি নির্মাণ করবে এই কোম্পানিটি। এনিয়ে গত মার্চে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা (এমওইউ) চুক্তিও সই করেছে।
এদিকে ধীরাশ্রম আইসিডি'র সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ৩,৪৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় কিলোমিটার রেল লিঙ্ক প্রতিষ্ঠার আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
চলতি বছরেই সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি শুরু করার আশা করছে রেলওয়ে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, "কমলাপুর স্টেশনে প্রস্তাবিত মাল্টি মোডাল ট্রানজিট হাব নির্মাণ এবং ঢাকা চট্টগ্রাম করিডোরে হাই-স্পিড ট্রেনের স্টার্টিং স্টেশন এবং পদ্মা রেল লিংক কমলাপুর আইসিডি থেকে শুরু হবে। ফলে পণ্য হ্যান্ডলিং এবং পরিবহনের অবিচ্ছিন্ন সুবিধাসহ ধীরাশ্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিডি স্থাপনের সিন্ধান্ত নেয় সরকার।"
তিনি জানান, কমলাপুর আইসিডির ধারণক্ষমতা ৯০ হাজার টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইক্যুয়াভেলেন্ট ইউনিট)। যা মূলত ২০ ফুটি কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতার সূচক।
সলিমুল্লাহ বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ কন্টেইনার ঢাকা অভিমুখে পরিবহন করা হয়। এর মাত্র ১০ শতাংশ রেলপথে আসে। তবে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে রেলওয়ে কন্টেইনার পরিবহন ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।"
"খুব শিগগির কমলাপুর আইডিসির কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। এ কারণে সরকার কমলাপুর আইসিডি ধীরাশ্রমে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে রেলের কন্টেইনার পরিবহন ও আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে," যোগ করেন তিনি।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে, প্রস্তাবিত আইসিডি'র কন্টেইনার পরিচালনা সক্ষমতা তিন লাখ ৫৪ হাজার টিইইউ হবে। এজন্য ২২২.৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর নির্মিত হবে ৬ কিলোমিটারের সংযোগ রেললাইন।
ব্যবসায়ীদের রেলপথে পণ্য পরিবহনে উৎসাহী করতে ইতোমধ্যেই কন্টেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) নামক একটি কোম্পানি গঠনের কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে।
সিসিবিএল গুদাম ও বন্দর থেকে স্টেশনে মালামাল আনা-নেওয়া করবে।
উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "কমলাপুরের আইসিডি অনেক আগেই ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। এটা করা হলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে, যানজট কমবে। অন্যাদিকে ধীরাশ্রমে আইসিডি স্থানান্তর করা হলে কন্টেইনার জট কমবে। তাছাড়া আমাদের কারাখানাগুলো গাজীপুর-টঙ্গী কেন্দ্রীক, এতে আমদানি-রফতানিকারকদের সুবিধা হবে।"
তবে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় বলে মনে করছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডস্ট্রিজের সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
তার মতে, দেরীর কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। সময় ও খরচ কমাতে ধীরাশ্রমের আইসিডি এডিবি অর্থায়নে হওয়ার উচিত।