যেভাবে বিয়ে হয় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাজী মো. আনিসুর রহমান।
একই দিনে আদালতে আরও সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলার অপর দুই সাক্ষী মো. কামাল হোসেন এবং মিনারা বেগম। এ নিয়ে এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে ২৯ জনের সাক্ষগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু সাংবাদিকদের জানান- কাজী মো. আনিসুর রহমান স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে বলেছেন, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিবাহ আমি সম্পন্ন করি। ওইদিন নয়ন বন্ডের কিছু বন্ধু আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। তখন নয়ন বন্ডের বাসায় নয়ন বন্ডের মা এবং মিন্নিসহ অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। নয়ন বন্ডের বাসায় বসেই পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহরে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিবাহ হয়।
তিনি আরও বলেন, বিয়ে সম্পন্ন করার পর আমি যখন জানতে পারি মিন্নি বরগুনা পৌরসভার আবু সালেহ কমিশনারের ভাইর মেয়ে, তখন আমি সালেহ কমিশনারকে আমার মোবাইল দিয়ে কল দিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের খবর জানাই। তখন তিনি আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। এরপর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও আমাকে ফোন করে বিবাহের বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেন।
আইনজীবী কিসলু আরও বলেন- এরপর কাজী মো. আনিসুর রহমান জানতে পারেন রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির ফের বিবাহ হয়েছে। রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের পরদিন মিন্নির বাবা কাজিকে ফোনে বলেন, মিন্নি ও নয়ন বন্ড কাল তার কাছে যাবে। আপনি ওদের ডিভোর্স করিয়ে দিয়েন। কিন্তু মিন্নির বাবার কথা অনুযায়ী ওইদিন তারা কাজীর কাছে আসেনি। এর পরেরদিনও ফোন করে কাজীকে একই কথা বলেন মিন্নির বাবা কিশোর। কিন্তু তার পরদিনও ডিভোর্সের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ড কাজীর কাছে না আসলে কাজী এবার মিন্নির বাবাকে ফোন দেন। তখন মিন্নির বাবা কাজীকে বলেন, ওরা দুজনে কমিটমেন্ট করেছে, ওদের বিয়ের কথা ওরা কাউকে জানাবে না। গোপন রাখবে।
সাক্ষ্যপ্রদানের সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের কাজী মো. আনিসুর রহমান আদালতে তার বিবাহ রেজিস্টার বালাম উপস্থাপন করেছেন বলে জানান আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু।
গতবছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক। পাশাপাশি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এবং মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয়জন আসামি জামিনে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারে।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।