৩৯ বছর কোমায় থেকে পৃথিবীকে বিদায় জানালেন সাবেক ফরাসি ফুটবলার
১৯৮২ সাল। সবেমাত্র খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন ফরাসি ডিফেন্ডার জাঁ-পিয়েরে আদামস। তবে ফুটবলকে কী আর বিদায় বলে দেওয়া যায়?
নাম লেখালেন একটি কোচিং কোর্সে। সেটিই যেন কাল হলো!
কোর্সের তৃতীয় দিনেই হাঁটুতে ব্যথা পেলেন আদামস। জানা গেলো লিগামেন্ট ভেঙে গেছে তার। লিগামেন্টের অস্ত্রোপচারের জন্য পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লিঁও'র এক হাসপাতালে গেলেন তিনি। সে বিদায়ই পরিবারের কাছে তার শেষ বিদায় হয়ে থাকলো।
আর গতকাল (৬ই সেপ্টেম্বর) পৃথিবীকেও শেষবারের মতো বিদায় বলে দিলেন ফুটবল মাঠের এই যোদ্ধা। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের ভুলে প্রায় ৪০ বছর কোমায় থেকে অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন আদামস।
একটি সাধারণ হাঁটুর অস্ত্রোপচার হলেও দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ভুল চেতনানাশক দিলে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় আদামসের ব্রেন। দীর্ঘস্থায়ী কোমায় চলে যান তিনি।
সেনেগালের ডাকারে জন্মানো আদামস ফরাসি জাতীয় দলের হয়ে মোট ২২টি ম্যাচ খেলেছেন। সত্তরের দশকে কিংবদন্তি সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার মারিয়াস ত্রেজরকে সঙ্গে নিয়ে ফরাসি রক্ষণে দুর্দান্ত একটি জুটি গড়ে তুলেছিলেন আদামস। এই দুই কৃষ্ণাঙ্গ ডিফেন্ডারকে সমর্থকেরা একসঙ্গে ডাকতেন 'লা গার্দে নইরা' (কৃষ্ণাঙ্গ প্রহরী) নামে।
ক্লাব ফুটবলে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত খেলেছেন নিসের হয়ে। এরপর নিস হয়ে খেলেছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়েও।
এতোবছর আদামসের দেখভাল করেছেন তার স্ত্রী বের্নাদেত্তে। স্বামী চিরস্থায়ী কোমায় চলে গেছেন, সেটা জানার পরও স্বামীর প্রতি ভালোবাসা একটুকুও কমেনি তার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদামসের দেখভালের ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন বের্নাদেত্তে। এতোবছর বাসায় থেকেই স্বামীর দেখভাল করেছেন এই মহীয়সী নারী। চিকিৎসকরা স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রস্তাব দিলেও বার বার তা নাকচ করে দিয়েছেন বের্নাদেত্তে।
২০০৭ সালে বের্নাদেত্তে একবার বলেছিলেন, 'জাঁ–পিয়েরে অনুভব করতে পারে, গন্ধ টের পায়, শুনতে পারে, কুকুর ডাকলে লাফিয়ে ওঠে, কিন্তু দেখতে পায় না।'
বের্নাদেত্তে জানিয়েছিলেন, এই দুর্ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনই ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। দায়ী চিকিৎসকদেরও তেমন বিচার হয়নি। দুর্ঘটনার সাত বছর পর, ১৯৮৯ সালে দায়ী চিকিৎসকদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এক মাসের স্থগিত কারাবাস এবং ৭৫০ ইউরো জরিমানা করা হয় তাদের।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান