করোনাকালে বেড়েছে আত্মহত্যা, দেশে দিনে আত্মহত্যার ঘটনা ৩৫টির বেশি
করোনাকালে দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। তারা জানান, মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণে করোনাকালে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনা।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলেও দাবি করছে বেসরকারি কোনো কোনো সংস্থা।
করোনা ইস্যুসহ নানা রকম হতাশা, বিষণ্ণতা বেড়েছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। যে কারণে আত্মহত্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল অডিটোরিয়ামে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিসটসের (বিএপি) "ডিজেমিনেশন অব সার্ভে রিপোর্ট: এপিডেমিওলজি অব সুইসাইড অ্যান্ড সুইসাইডাল বিহেভিয়ার অ্যামং ইয়ুথ অ্যান্ড অ্যাডালেসেন্ট ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ তথ্য দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা করোনার মধ্যে একটি সংগঠনের করা এক বছরের মধ্যে আত্মহত্যার জরিপের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশে করোনার শুরু থেকে এক বছরে সারা দেশে ১৪ হাজার লোক আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী।
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ এর জুন পর্যন্ত করা বিএপির আত্মহত্যা নিয়ে করা 'এপিডেমিওলজি অব সুইসাইড অ্যান্ড সুইসাইডাল বিহেভিয়ার অ্যামং ইয়ুথ অ্যান্ড অ্যাডালেসেন্ট ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের গবেষণার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন বক্তারা।
বর্তমানে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে এনআইএমএইচের পরিচালক অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রয় পোদ্দার বলেন, "বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করলে দক্ষিণ এশিয়ায় আত্মহত্যায় প্রথম দেখা যায় আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে। আমাদের দেশে স্বাভাবিক মৃত্যু কমলেও আত্মহত্যা দিন দিন বাড়ছে। আর করেনাকালে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।"
বিএপির সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, "আমাদের আত্মহত্যা নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা উচিত এজন্য যে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা রোধ করতে মাত্র দুটি বিষয় জরুরি। মানসিক সমস্যা দূর করা এবং অংশীদারদের মিলিতভাবে কাজ করা।"
দেশে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, "মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া সুস্বাস্থ্য সম্ভন নয়। কিন্তু এটিই বেশি উপেক্ষিত। যদি দেশে সবগুলো মেডিকেল কলেজে এ বিষয়ে পড়ানো হতো তাহলে আমাদের ডাক্তার যেমন বাড়ত, তেমনি মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি পেত। আমাদেরকে মেডিকেল কলেজে কাজ করতে হবে। যারা আত্মহত্যার ঝুঁকি নিয়ে আছে তাদেরকে বাঁচাতে হবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, "আত্মহত্যা একটি রোগ। এটি একটি পাবলিক হেলথ ইস্যু। এটিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কোনো দেশে মহামারি আসলে আত্মহত্যাও বেড়ে যায় ফলে দেশে করোনার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে। এর সমাধানের মূল বিষয় হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা চাই আমাদের পলিসি আপডেট হোক।"
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০ সালে ১১ হাজার ২৫৯ জন আত্মহত্যা করে। তাদের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেন ৯ হাজার ৩১০ জন। সরকারের হিসাবে করোনাকালে ১৭.৩১ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ।
এ বছরের মার্চ মাসে তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনটি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে করা রিপোর্টে এক বছরে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা, যাদের হার ৫ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। প্রতি বছর আত্মহত্যার সংখ্যা গড়ে আট লাখ।